আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল থাকলেও তার ওপর কর বাড়বে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে গতকাল ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। ইআরএফ ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা।
আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল থাকা প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে তিনটি ভাগ আছে। একটি ভাগ আগামী ৩০ জুন এমনিতেই বাদ হয়ে যাবে। আরো একটি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এটা নিয়ে আমরা ব্যাপক আলোচনা করব। যদি থাকেও তাহলে ট্যাক্স অনেক বেশি হবে। এখন যে হারে ট্যাক্স দিচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ট্যাক্স দিতে হবে।
আমরা এটা নিয়ে কাজ করব। এটা উঠিয়ে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। যদি উঠিয়ে দিতে পারি তাহলে আর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকল না। বিশেষ করে রিহ্যাবের একটা বড় ডিমান্ড থাকে যে এ সুযোগ না দিলে কেউ ফ্ল্যাট কিনবে না, ব্যবসা-বাণিজ্য হবে না। এ রকম কিছু বিষয় আছে, আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব। হয়তো রাখলেও ট্যাক্সটা বাড়বে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর এনবিআরের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ, নগদ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, আর্থিক স্কিম ও ইনস্ট্রুমেন্ট, সব ধরনের ডিপোজিট বা সেভিং ডিপোজিটের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাজেটের সময় ঘোষিত আবাসন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত পরিমাণে কর পরিশোধের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ (কালো টাকা) প্রদর্শিত (সাদা) করাসংক্রান্ত বিধানটি বহাল রাখা হয়েছে। এলাকাভেদে স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেস ও ভূমিতে প্রতি বর্গমিটারের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণে কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শিত করার সুযোগ রয়ে গেছে এখনো।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘জমি বিক্রির সময় ডেভেলপারের ওপর প্রযোজ্য কর ক্রেতার কাছ থেকে কৌশলে আদায় করা হয়। অথচ এটা ডেভেলপারের দেয়ার কথা। ফ্ল্যাট বিক্রির সময়ও বিক্রেতার ওপর প্রযোজ্য কর কৌশলে ক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছেন বিক্রেতা। এ দুটিই অনৈতিক কাজ। এটাই হলো আমাদের সামাজিক সমস্যা।’
তিনি বলেন, ‘দেশে গরিবরাই বেশি পরোক্ষ কর দেয়। তারা জানেনও না কতভাবে এ কর তারা দিচ্ছেন।’
বড় বাজেট তৈরি করার প্রবণতা কমাতে হবে এমন মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাজেট যেটা ঘোষণা করা হয়, সেটাও বাস্তবায়ন হয় না। অনেকের টাকা ফেরত আসে। অনেকে আবার শুধু শুধু খরচ করে ফেলেন। আবার অনেকে জরুরি যন্ত্রপাতিও কেনেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এমন একটি রাজস্ব বিভাগ তৈরি করতে যেন আমরা প্রচুর রাজস্ব আহরণ করতে পারি। আমাদেরকে ঋণ করতে না হয়।’ এনবিআর এখন পূর্ণাঙ্গ (এন্ড টু এন্ড) অটোমেশনের দিকে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি, বিদ্যমান কর অব্যাহতিও কমাব, উঠিয়ে দেব এবং যারা কম হারে দেয়, তাদের বাড়িয়ে দেব। নতুন কোনো কর অব্যাহতি দেয়া হবে না। প্রকৃত অর্থে আগামী বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী।’
মূল প্রবন্ধে র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. আবু ইউসুফ বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ উন্নয়ন খাতের নানা ইস্যুতে চাপ বাড়ে। বাজেট কমাতে হয়। সেবা পেলে মানুষ কর দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বিভিন্ন খাতের সরকারি সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
এসএন