আমাদের মধ্যে অনেকেই সর্বদা ক্লান্ত ও নিস্তেজ থাকেন। তারা যতই খান না কেন, তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসে না। এর পেছনে ছোটখাটো কিছু বিষয় থাকতে পারে। এগুলো অবহেলা করা উচিত নয়।
কখনো কখনো এটি একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও ঘটতে পারে। বিশেষত রক্তাল্পতা আপনাকে সর্বদা ক্লান্ত ও ক্লান্ত বোধ করাতে পারে।
বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ রক্তাল্পতার সমস্যায় ভুগছেন। লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন বাধা পেলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
তাৎক্ষণিকভাবে তা শনাক্ত করা না গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
অ্যানিমিয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা খুবই জরুরি। তবেই আপনি সময়মতো চিকিৎসা পেতে পারেন এবং আরো গুরুতর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন, লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
চুল পড়া
রক্তাল্পতা চুল ও নখে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দেয়। চুল পড়া বেড়ে যায়, নখ দুর্বল হয়ে যায় এবং সহজেই ভেঙে যায়। কেউ কেউ নখের গায়ে দাগ দেখতে পান। চুল পাতলা হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়রনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণেই এমন হয়। প্রতিদিন ৫০-১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। তবে রক্তাল্পতা থাকলে তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, আয়রনের ঘাটতির কারণে চুলের ফলিকল শক্তি হারায়, চুল পড়ে যাওয়ার মাত্রা বাড়ে।
শ্বাস নিতে না পারা
রক্তে লোহিত রক্তকণিকা কম থাকলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঠিকমতো অক্সিজেন পায় না। এ কারণে আপনি সাধারণত হাঁটা বা কাজ করার সময় দমবন্ধ বোধ করেন। রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এই সমস্যাটি
বেশি দেখা যায়।
অনেকের সিঁড়ি বেয়ে উঠলেও বা কিছুটা দ্রুত হাঁটলেও শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। এই উপসর্গ প্রতিদিন বাড়লে অ্যানিমিয়া সন্দেহ করা হয়। অক্সিজেনের সরবরাহ কমে গেলে হৃৎপিণ্ড আরো বেশি কাজ করে। এটি দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর সমস্যা নিয়ে আসবে। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
পিরিয়ডের সমস্যা
নারীদের রক্তাল্পতা পিরিয়ড চক্রকে প্রভাবিত করে। রক্তপাত বাড়তে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। অথবা নিয়মিত না-ও আসতে পারে। যদি খুব বেশি রক্তক্ষয় হয়, তবে আয়রনের মাত্রা আরো হ্রাস পাবে এবং ক্লান্তি ও মাথা ঘোরা বৃদ্ধি পাবে।কিছু ক্ষেত্রে কম আয়রন হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে। এর ফলে পিরিয়ড ধীর হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে, শক্তির স্তর, ফোকাস ও প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রভাব পড়বে। গবেষণা অনুসারে, নারীদের মধ্যে ২০ শতাংশ রক্তাল্পতার ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত।
স্বাদে পরিবর্তন
রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জিহ্বায় সমস্যা দেখা যায়। জিহ্বা জ্বলতে ও মসৃণ বোধ করতে শুরু করে। একে এট্রফিক গ্লসাইটিস বলা হয়। ফলে আপনি স্বাদ জানেন না এবং অনুভব করেন যে আপনি যা-ই খান না কেন, স্বাদ পরিবর্তিত হয়েছে।কিছু লোক বরফ ও কাদা খেতে চায়। এই লক্ষণগুলো দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করতে পারে। পরিস্থিতি তখনই আসে যখন আপনি যে খাবার খান তা উপভোগ করতে পারেন না।
এমন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
ঘরে রক্তশূন্যতা নিয়ন্ত্রণে খাদ্যতালিকায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। মাংস, ডিম, শাক-সবজি, মটরশুঁটি, সামুদ্রিক খাবার, বাদাম, মসুর ডাল, শুকনো ফল ইত্যাদি খুব উপকারী। আয়রন সুরক্ষিত সিরিয়ালগুলোও একটি ভালো বিকল্প। এসব খাবারের সঙ্গে আয়রন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যাবে।চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিভাবে নেবেন তা ঠিক করুন। লেবু ও কমলালেবুতে ভিটামিন সি বেশি থাকলে আয়রন শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়। প্রতিদিন এই ডায়েট মেনে চললে রক্তাস্বল্পতা দূর হবে।
এফপি/এস এন