বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে দেওয়া তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য ও মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘ ও তার শতাধিক অংশীদারের সমন্বয়ে ‘২০২৫-২৬ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’ নামের একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে। এটির বাস্তবায়নের জন্য ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার প্রয়োজন।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে বসাবস করছেন ১৪ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা। আজ আট বছর ধরে তারা শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন। এই আট বছরে রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক স্পটলাইট থেকে অনেকাংশে সরে গেছে, কিন্তু তাদের সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।”
“বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীদের অন্যতম এই রোহিঙ্গারা এখনও খাদ্য, বস্ত্র, আবাসন ও রান্নার জ্বালানি তেলের জন্য দাতাদের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যদি সহায়তা কমে যায়, তাহলে গুরুতর মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে সেখানে।”
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে একযোগে বোমা হামলা ঘটায় সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। সেই হামলার প্রতিক্রিয়ায় আরাকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ভয়াবহ অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
সেনা সদস্যদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের মুখে টিকতে না পেরে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে কক্সবাজারের টেকনাফ জেলার কুতুপালংয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে তাদেরকে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান শুরু হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই চলে আসছে। বর্তমানে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন ১৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
শুরুর দিকে এই রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। পরে এক সময় এই দায়িত্ব নেয় জাতিসংঘ। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের সবাই জাতিসংঘ থেকে খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকেন।
রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার বিষয়টি তদারক করে ডব্লিউএফপি; আর ডব্লিউএফপির তহবিলে এতদিন সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। বস্তুত, এই সংস্থার তহবিলের ৮০ শতাংশই আসত যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা প্রদান সংস্থা ইউএসএইড থেকে।
তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি সহায়তা স্থগিতের আদেশের পর থেকে ইউএসএইডের সেই তহবিল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারে সংঘাত তীব্র হওয়ায় গত কয়েক মাসে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন নতুন প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা।
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, “যতদিন পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতি শান্ত না হয় এবং এই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি না হয়, ততদিন শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কর্তব্য।”
এমআর/টিএ