ভল্টে জায়গা না হলে নতুন নোট ‘তুলে নেবে’ কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্টে নতুন নোট রাখার জায়গা না থাকলে তা ‘প্রত্যাহার করে’ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান  গণমাধ্যমকে বলেন, “যখন যে ব্যাংক সমস্যার কথা বলবে, তৎক্ষণাৎ তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসা হবে।”

রীতি মেনে দুই ঈদের সময় ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও নিজেদের কাছে থাকা নতুন নোট বিনিময় করে।

এবারের প্রস্তুতিও তেমনই ছিল। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৮০টি শাখা থেকে নতুন নোট বিনিময় করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এরপর ব্যাংকের শাখাগুলো সর্বোচ্চ ৬৫ লাখ টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করে ভল্টে রাখে।এরমধ্যে গত ১০ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

ব্যাংকগুলোর শাখায় যেসব ‘ফ্রেশ’ নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করতে বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।নতুন নোট বিনিময় বন্ধ রাখার ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা ছিল না। তবে গুঞ্জন রয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নিয়ে আপত্তি থাকায় এবার ঈদে নতুন নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে না।

এই টাকা ব্যবহার করতে না পেরে ‘বিড়ম্বনায়’ পড়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। তারা বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি না থাকায় তারা নতুন নোটে কোনো লেনদেন করতে পারছে না। এগুলো পড়ে থাকায় ভল্টের জায়গাও ‘অপচয়’ হচ্ছে।এমন পরিস্থিতিতে ‘অসুবিধায় পড়া’ ব্যাংকগুলো থেকে টাকা উঠিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “এখনই সব ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে আনার পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে যেসব ব্যাংক ভল্টে নতুন টাকা রাখতে সমস্যায় পড়বে, সেসব ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা উঠিয়ে নেবে।

অন্য ব্যাংকগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, “টাকাগুলো এখন ব্যাংকেই থাকবে। তবে তারা সেগুলো বাজারে ছাড়বে না। নতুন করে ছাপানো নোট পাঠানোর পরিবহনে সেগুলো ফিরিয়ে নেওয়া হবে।”

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, “প্রতিটি শাখার ভল্টের ধারণক্ষমতা আছে। এর চেয়ে বেশি টাকা জমা হলে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সোনালী ব্যাংকের ‘চেস্ট’ শাখায় জমা দিতে হয়। প্রতিটি ব্যাংকে সাধারণত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট থাকে বেশি। তাতে জায়গা কম লাগে।

“ঈদের আগে ২৫ মার্চ এসব টাকা খালি হওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নতুন নোট বিতরণ স্থগিত করার সিদ্ধান্তে ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়েছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে আগামী এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের শুরুতে।বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপানোর কাজটি করে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড, যা টাকশাল নামে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা পেলেও ১৯৮৮ সালের জুন মাসে এক টাকা ছাপানোর মধ্য দিয়ে এ প্রেসের নোট ছাপানো শুরু হয়।

ওই বছরের নভেম্বর মাসে ১০ টাকার নোটও ছাপানো হয় সেখানে। প্রতিটি নোট ছাপানোর আগে এর নকশা অনুমোদন করে সরকার। সেজন্য দরপত্র ডেকে চিত্র শিল্পীদের দিয়ে নোটের নকশা করানো হয়।

নকশা চূড়ান্ত হলে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ, কালি ও প্লেট তৈরি করা হয়। নকশা অনুযায়ী বিদেশ থেকে প্লেট তৈরি করে আনার পর ছাপার কাজটি করে টাকশাল।

সবশেষ নতুন নকশায় ২০০ টাকার নোট চালু হয় ২০২০ সালে। ওই নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে নতুন রূপ দেওয়া হয়।আগে ছাপানো নোটে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে আরো স্পষ্ট করে দুই ধরনের ছবি ব্যবহার করা হয় ২০২০ সাল থেকে। এরপর ছাপানো সব নোটে ওই দুই ধরনের ছবিই ব্যবহার করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া সবশেষ নোট ছাপা হয়েছিল ২০০৯ সালে। তখন গভর্নরের দায়িত্বে থাকা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। ওই সময় ছাপা লাল রঙের ৫০০ টাকা এবং এক হাজার টাকার কিছু নোট এখনো দেখা যায়।

এমআর


Share this news on: