মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেনে অব্যাহত যুক্তরাষ্ট্রের হামলা। দেশটির ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। হামলায় হুথি সদস্যদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
এমন অবস্থায় ইয়েমেনে হামলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, শান্তির জন্য মরছে হুথিরা। এমনকি হুথিদের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর হামলার ফলাফল “অবিশ্বাস্য” বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এর আগে ইয়েমেনে সামরিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি গোপন আলোচনা ফাঁস হয়ে যায়। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সম্প্রতি দেশটির হুথি গোষ্ঠীর ওপর হামলার বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপে এক সাংবাদিককে যুক্ত করেন। আর সেখান থেকেই এটি ফাঁস হয়।
মূলত গত কয়েক দিন ধরেই ইয়েমেনে হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেখানে যে হামলা চালানো হবে, তা আগেই জেনে গিয়েছিলেন এক সাংবাদিক। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একটি ভুলের কারণেই ওই কথা আগেই জেনে যান ওই সাংবাদিক। আর এটি নিয়েই দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়।
আল জাজিরা বলছে, মেসেজিং গ্রুপ চ্যাটে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইয়েমেনে বোমা হামলার সামরিক পরিকল্পনা প্রকাশের বিষয়ে স্থানীয় সময় বুধবার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে কথা বলার সময় ট্রাম্প যুদ্ধ পরিকল্পনা ফাঁসের বিষয়ে হৈচৈকে “ডাইনি-খোঁজার” মতো কাজ বলে বর্ণনা করেন এবং বলেন, “আমি এর (গ্রুপ চ্যাট) সাথে জড়িত ছিলাম না। আমি সেখানে ছিলাম না।”
কিন্তু তিনি বলেন, গত সপ্তাহে শুরু হওয়া ইয়েমেনের হুথিদের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক অভিযানের ফলাফল “অবিশ্বাস্য”। ট্রাম্প বলেন, “হুথিরা শান্তি চায় কারণ তাদের কাছ থেকে নরক ছিটকে যাচ্ছে। হুথিরা শান্তির জন্য মারা যাচ্ছে।”
গত ১৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনে শুরু হওয়া মার্কিন আক্রমণে কমপক্ষে ৫৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে পাঁচ শিশু এবং দুই নারীও রয়েছেন। হুথিরা বলেছে, মার্কিন হামলা তাদের লোহিত সাগরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাহাজ চলাচল বন্ধ করতে বাধা দিতে পারবে না।
মূলত হুথিরা ইয়েমেনের সানা নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিজেদেরকে দেশের সরকারি সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। ২০২৩ সাল থেকে হুথিরা লোহিত সাগরে এবং তার আশপাশে জাহাজ লক্ষ্য করে এবং ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলি সরকারকে চাপ দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এসব হামলা চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।
তবে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল এবং সেই সময় থেকে লোহিত সাগরে আক্রমণ বন্ধ করে দেয় হুথিরা। কিন্তু ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তার প্রবেশে ইসরায়েলের অবরোধের জবাবে এই মাসের শুরুতে পুনরায় হামলা শুরু করে গোষ্ঠীটি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনও ইয়েমেনে হুথিদের অবস্থানগুলোতে বোমাবর্ষণ করেছিল। কিন্তু ওয়াশিংটনের সেসব অভিযান সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর আক্রমণ থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল।
হুথি সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান মাহদী আল-মাশাত গত মঙ্গলবার বলেছেন, “ইয়েমেনকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল যাই হোক না কেন” তাদের অবস্থান পরিবর্তন হবে না।
এমন অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইয়েমেনে তার দেশের হামলার জন্য লোহিত সাগরের জাহাজ চলাচলের বিরুদ্ধে হুথিদের অভিযানকে দায়ী করছেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “তারা সমুদ্র থেকে জাহাজ ছিনিয়ে নিচ্ছিল।”
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, সুয়েজ খালে আমাদের জাহাজ চলাচলের মাত্র ২০ শতাংশ চালু আছে। তাদের ভিন্ন পথ দিয়ে যেতে হয়, যা ভ্রমণের জন্য কয়েক সপ্তাহ বেশি সময় নেয় এবং এটি সত্যিই বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে। কিন্তু হুথিরা প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা শান্তি আলোচনা করতে চায়।”
আরএ/টিএ