৭০০ ব্যান্ডের নিলামের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ, কী বলছে সরকার?

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের স্বার্থে সরকার ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের নিলামে শর্তসাপেক্ষে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ের ইঙ্গিত দিয়েছে। সেইসঙ্গে স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণের বেঞ্চমার্ক ডলারে হওয়াকে বাস্তবসম্মত বলা হয়েছে। তবে, ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে স্পেকট্রাম নিলামের মানদণ্ড নিয়ে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জানানো উদ্বেগের জবাবে বিভিন্ন বিষয়ের প্রেক্ষাপট ও ব্যাখ্যাসহ এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

সম্প্রতি একটি চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ বিষয়ে জবাব দিয়েছেন।

এর আগে, গত ১৬ মার্চ গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের মূল বিনিয়োগকারীরা ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন।

যার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ডিভাইস প্রবৃদ্ধির নিম্নহার বিবেচনায় রেখে সরকার ৫–১০ শতাংশ মূল্যছাড়ের বিষয়টি যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করতে পারে। যা নির্ভর করবে অপারেটরদের অবকাঠামো উন্নয়ন, নাগরিকদের জন্য মানসম্মত সেবা ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণের প্রতিশ্রুতির ওপর।

স্পেকট্রাম মূল্যে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের প্রসঙ্গে তিনি চিঠিতে বলেন, গত তিন বছরে বাংলাদেশি টাকা মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় ৪০ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে। এই মুদ্রা অবমূল্যায়ন বিবেচনায় নেওয়ার পর বর্তমান স্পেকট্রাম মূল্যায়ন বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে। বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি মালিকানা রয়েছে এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত তাদের মুনাফা মার্কিন ডলারে রেমিট্যান্স করে থাকে। ফলে, স্পেকট্রামের মূল্য নির্ধারণে ডলারভিত্তিক মূল্যায়নকে কার্যকর পদ্ধতি, যা মুদ্রা বিনিময় ঝুঁকি কমাবে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, অপারেটরদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে স্পেকট্রাম সরবরাহ করাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখে মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ৪৫ (২x৪৫) মেগাহার্টজ ব্যান্ডের মধ্যে মাত্র ২৫ (২x২৫) মেগাহার্টজ নিলামে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে। সেটিও সরকার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। বাকি স্পেকট্রাম যথাসময়ে দেওয়ার বিষয়ে তারা কাজ করছেন যেন, এটি প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিকভাবে টেকসই হয়।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ফোরজি ও ফাইভজি প্রযুক্তির বিস্তারে ৭০০ ব্যান্ড একটি প্রিমিয়াম ফ্রিকোয়েন্সি, যা প্রযুক্তিগত নিরপেক্ষতার সুবিধা দেয়। বৃহৎ কভারেজ পরিধি ও নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সির কারণে এই ব্যান্ডটি ফোরজি, ফাইভজি এবং আইওটি নেটওয়ার্ক স্থাপনার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। বর্তমানে, সামগ্রিক ফোরজি হ্যান্ডসেটের প্রায় ৫০ শতাংশ ডিভাইস ৭০০ ব্যান্ড সমর্থন করে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়াতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নিয়েছে। ফলে দেশীয় উৎপাদক এবং আমদানিকারকরা এখন থেকে এমন কোনো নতুন মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে আনতে পারবে না, যা ৭০০ ব্যান্ড সমর্থন করে না।

তিনি আশা জানিয়ে বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ আগামী কয়েক প্রান্তিকের মধ্যে ৭০০ ব্যান্ডে সমর্থিত ডিভাইসের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে। যা ভবিষ্যৎ ফাইভজি সম্প্রসারণ ও ডিজিটাল সংযোগ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের ব্যবহারের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। নিম্ন-ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলোর ব্যবহার হার ৮৪–৯৮ শতাংশ। যেখানে উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলোর ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম, যার পরিমাণ মাত্র ৭–১৮ শতাংশ। এই অসমতা নির্দেশ করে যে, উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ধারিত এলাকায় সক্ষমতা বৃদ্ধির যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখনও পূরণ হয়নি। এর অন্যতম কারণ, যথাযথভাবে বেজব্যান্ড ইউনিট এবং রেডিও রিসোর্স ইউনিট স্থাপনে ঘাটতি রয়েছে, ফলে ধারাবাহিক সক্ষমতা স্তর তৈরি হয়নি। এতে মানসম্মত সেবার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গ্রাহকরা নিম্নমানের সেবার পাচ্ছেন, যার মধ্যে ধীরগতির ইন্টারনেট, দুর্বল সংযোগের স্থায়িত্ব, মোবিলিটি ও কলড্রপের হার বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট প্যাকেজের কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বৃদ্ধির পথে বাধা তৈরি হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলোর নিম্ন ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে অপারেটররা এখনও গ্রাহকদের জন্য উপযুক্ত মূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ সরবরাহে আগ্রহ দেখায়নি। পাশাপাশি, জাতীয় ইন্টারনেট প্যাকেজের খুবই স্বল্প মেয়াদি ভ্যালিডিটি ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করছে। এটি এমন একটি পরিকল্পিত দুষ্টচক্রের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে অপারেটররা কৃত্রিমভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি সীমিত রেখে চলেছে।

একইসঙ্গে জাতীয় সম্পদ হিসেবে স্পেকট্রামের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে, নিরবচ্ছিন্ন ক্যাপাসিটি লেয়ার তৈরিতে বেজব্যান্ড ইউনিট এবং রেডিও রিসোর্স ইউনিট স্থাপন, ইন্টারনেট খরচ কমানো এবং ডিজিটাল বৈষম্য হ্রাসে সরকার এই খাতের সবার সঙ্গে কার্যকর আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও চিঠিতে জানিয়েছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

আরএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

জংলি সিনেমায় দিঘির অভিনয়, কৃতজ্ঞতা জানালেন পরিচালককে! Apr 01, 2025
দর্শকদেরকে হাতজোড় করে বিনীতভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করছি: বুবলী Apr 01, 2025
img
টানা ছুটিতে রাজধানীতে যেভাবে চলছে চিকিৎসাসেবা Apr 01, 2025
আমি সবসময় চেষ্টা করবো যেন নিজের পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে যেতে পারি: নায়ক সিয়াম Apr 01, 2025
img
ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’-র আশঙ্কায় শেয়ার বাজারে পতন Apr 01, 2025
img
শিবচরে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, নিহত ২ Apr 01, 2025
img
যে কারণে উন্নত চিকিৎসায় বিকল্প ভাবা হচ্ছে চীনের হাসপাতাল Apr 01, 2025
img
মালয়েশিয়ায় গ্যাস পাইপলাইনে লিকেজ, ছড়িয়ে পড়ল ভয়াবহ আগুন Apr 01, 2025
img
চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় Apr 01, 2025
img
খুঁটির সাথে ধাক্কায় প্রাণ হারাল মোটরসাইকেল আরোহী Apr 01, 2025