ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের পর তুরস্কব্যাপী সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রায় ১ হাজায় ৮৭৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোগলুকে গত রোববার দুর্নীতির অভিযোগে বিচারাধীন অবস্থায় কারাগারে পাঠানো হয়। তাকে গ্রেপ্তারের ফলে তুরস্কে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় এবং দেশজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়।
ইমামোগলুর প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি), অন্যান্য বিরোধী দল, অধিকার গোষ্ঠী এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো বলেছে, মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা এবং মামলার কারণে তাকে বরখাস্ত করা এরদোয়ানের জন্য 'সম্ভাব্য নির্বাচনী হুমকি দূর করার' একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা।
তবে বিচার বিভাগের ওপর কোনো ধরণের প্রভাবের কথা অস্বীকার করে সরকার। সেই সঙ্গে আদালত স্বাধীন বলেও উল্লেখ করে এরদোয়ানের দল।
ইস্তাম্বুলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার সময় দেশটির বিচারমন্ত্রী ইলমাজ টুনক বলেছেন, আমরা কোনো রাজনীতিবিদের গ্রেপ্তার চাই না, তবে যদি কোনো অপরাধের প্রমাণ থাকে, তবে তা করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া বলেছেন, গত বুধবার বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে ১,৮৭৯ জনকে আটক করা হয়েছে। আদালত তাদের মধ্যে ২৬০ জনকে বিচারের জন্য জেলে পাঠিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৪৮৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং ৬৬২ জন এখনো বিচারিক প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া বিক্ষোভে ১৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই বিক্ষোভকে 'লোক দেখানো' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং বিক্ষোভকারীদের 'আইনি পরিণতির' বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
তবে বিরোধী দল সিএইচপি তুর্কি জনতাকে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। তারা ইস্তাম্বুল এবং বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ এবং বিক্ষোভের আয়োজন করে চলছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার সময় পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা তদন্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারকে বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৮ সালের জন্য নির্ধারিত পরবর্তী নির্বাচনে সিএইচপি'র প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ইমামোগলুর নাম ঘোষণার কয়েকদিন আগে এবং বিরোধী দলের ওপর মাসব্যাপী আইনি দমন-পীড়নের পর ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত সপ্তাহে ইমামোগলুকে আটক করার একদিন আগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তার ডিগ্রি বাতিল করে, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য যোগ্যতার শর্ত ছিল।
ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভ কভার করার সময় সাত স্থানীয় সাংবাদিককেও গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীতে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।বাকস্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স তাদের ২০২৪ সালের প্রেস স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে তুরস্ককে ১৫৮তম স্থান দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৯০% তুর্কি মিডিয়া সরকারের প্রভাবের অধীনে রয়েছে, যার ফলে জনতা বিরোধী দল বা স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের দিকে ঝুঁকছে।
এমআর/এসএন