যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেইনে অস্থায়ী প্রশাসন দেখতে চান পুতিন

নতুন নির্বাচন আয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতায় পৌঁছাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইনে এক ধরনের অস্থায়ী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন।

উত্তরাঞ্চলীয় মুরমান্সক বন্দর সফরে গিয়ে তিনি এ প্রস্তাব দেন বলে শুক্রবার রুশ বার্তা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, পুতিন এমন এক সময়ে ইউক্রেইন প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করলেন যখন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং মস্কো ও কিইভের সঙ্গে আলাদাভাবে বসে চার বছরে গড়ানো ইউক্রেইন যুদ্ধ থামাতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

ক্রেমলিনের এ শীর্ষ কর্তা আরও বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সত্যি সত্যিই শান্তি চান বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেইনে স্থল, নৌ ও আকাশ অভিযান শুরু করার পর এখন পর্যন্ত উভয়পক্ষের কয়েক লাখ সেনা ও বেসামরিক প্রাণ হারিয়ছে। ইউক্রেইনের কোটি কোটি লোক উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে, দেশটির অসংখ্য শহর মাটির সঙ্গে মিশেও গেছে। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবার মস্কো ও পশ্চিমা দেশগুলো একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, আলোচনায় বসার মতো বৈধতা ইউক্রেইনের এখনকার সরকারের নেই, কেননা দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসেই শেষ হয়ে গেলেও এখনও তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে বসে আছেন।

“নীতিগতভাবে, অবশ্যই জাতিসংঘ, ইউরোপের দেশগুলো এবং আমাদের অংশীদারদের তত্ত্বাবধানে ইউক্রেইনে একটি অস্থায়ী প্রশাসন চালু করা যেতে পারে। এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন, যার মাধ্যমে জনগণের আস্থাধারী একটি সক্ষম সরকার ক্ষমতায় বসবে, এবং তারপর তাদের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য,” বন্দরে নাবিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন পুতিন।

তার মতে, পূর্বসূরী জো বাইডেনের পথ অনুসরণ না করে ট্রাম্প যে সংঘাত বন্ধে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট শান্তি চান।

“অনেকগুলো কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আন্তরিকভাবেই সংঘাতের অবসান চান বলে আমি মনে করি,” প্রেসিডেন্ট এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থাগুলো।

ইউক্রেইনে অস্থায়ী প্রশাসন বিষয়ে পুতিনের মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেইনের শাসনব্যবস্থা কী হবে, তা দেশটির সংবিধান ও জনগণ ঠিক করবে।

এ প্রসঙ্গে রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে ইউক্রেইনের কোনো মন্তব্য না পেলেও জেলেনস্কি আগে বেশ কয়েকবারই তার ক্ষমতায় থাকার বৈধতা আছে বলে দাবি করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেইনে যে জরুরি অবস্থা আছে তার কারণে নির্বাচন আয়োজন করা যাচ্ছে না, তাছাড়া যুদ্ধের মধ্যে যে কোনো নির্বাচন আয়োজন করা এক ধরনের অসম্ভবই।

পুতিন জানিয়েছেন, ২০২২ সালে অভিযান শুরুর সময় রাশিয়া যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তা অর্জনে মস্কোর বাহিনী দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছে।

“রাশিয়া শান্তিপূর্ণ উপায়ে যে কোনো সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে, তবে নিজেদের ক্ষতি করে নয়। ইউক্রেইনের যেসব জায়গায় যুদ্ধ চলছে সর্বত্র আমাদের বাহিনী কৌশলগতভাবে ভালো অবস্থানে আছে। অনেকে যতটা দ্রুত ভেবেছেন ততটা না হলেও, আমরা ধীরে ধীরে, অবিচলভাবে, আস্থার সঙ্গে অভিযানের শুরুতে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি,” বলেছেন তিনি।

আরএ/টিএ

Share this news on: