চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বাংলাদেশ যাতে পশ্চিমা দেশ ও এশিয়ায় পণ্য রপ্তানি করতে পারে সে লক্ষ্যে এ দেশে বিনিয়োগ করতে এবং দেশটিকে একটি উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে শীর্ষস্থানীয় চীনা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা তার চীন সফরকালে সেদেশের শতাধিক শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা ও সিইওর সঙ্গে চারটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ সেশনে বলেন, বাংলাদেশ এখন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।

প্রধান উপদেষ্টা চীনা কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের সুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে কোনো বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা নেই এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্যতম সেরা প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যিক সুবিধা রয়েছে।

বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এবং নেপাল ও ভূটানের পাশাপাশি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের প্রবেশদ্বার উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, “এখন বাংলাদেশে আপনার কারখানা স্থাপনের সেরা সময়।”
বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ‘নতুন বাংলাদেশ’ এর স্বপ্ন, বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।

চীনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিপিআইটি) সহ-সভাপতি লি কিংশুয়াং বাংলাদেশ বিনিয়োগ সংলাপে বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীরা বৈশ্বিক পর্যায়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে এবং তাদের অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।

লি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চীনে আরও বিনিয়োগ প্রচারমূলক ইভেন্ট আয়োজনের অনুরোধ করেন, কারণ এখনো অনেক বিনিয়োগকারী দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে কারখানা স্থাপনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতন নন।

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে তার সংস্থা বাংলাদেশে আরও চীনা বিনিয়োগ সহজতর এবং দেশটিতে বিনিয়োগ প্রচারের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে।

শীর্ষ চীনা কোম্পানিগুলোর সাথে গোলটেবিল আলোচনার পরে পরিকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রযুক্তি শিল্প ও শিক্ষা খাতের নেতাদের সাথে তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্যানেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লংগি, মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অপ্পো, চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন কোম্পানি, হিসেনস ইন্টারন্যাশনাল,গাওতু এডুকেশন টেকনোলজি গ্রুপ, চায়না বায়োটেক এন্ড ফার্মাসিটিক্যালস ভ্যালি, চায়না ইন্টারনেট, চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন এবং চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে সামাজিক ব্যবসা এবং ‘থ্রি জিরো’ বিষয়েও বক্তব্য দেন।

সেখানে মুহাম্মদ ইউনূস নতুন এক সভ্যতা তৈরির আহ্বান জানান, যেখানে থাকবে: শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণ, শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য দারিদ্র্য ও শূন্য বেকারত্ব।

বিশ্বের অন্যতম সেরা তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পিকিং, রেনমিন ও সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ অধ্যাপক ও ডিন এবং শীর্ষ চীনা যুব নেতারা এই বৈঠকে অংশ নেন।

সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন লি দাওকুই মুহাম্মদ ইউনুসের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ তার নেতৃত্বে সমৃদ্ধ হবে এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।’

তিনি প্রস্তাব দেন যে বাংলাদেশের আমলা ও নীতিনির্ধারকদের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘একদিনের গভীর বিশ্লেষণ’ সেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে, যাতে তারা চীনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।

এফপি/এস এন

Share this news on: