মায়ানমারে রাস্তা ফুঁড়ে জলের মতো বেরোচ্ছে তরল মাটি

ভূমিকম্পের উচ্চ বহুতল ভবন সব চোখের সামনেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। ভূমিকম্পে কার্যত ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে মায়ানমার। তার প্রভাবে কেঁপে ওঠে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারতের কিছু অংশও। ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত ও নিখোঁজ হন। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৭.৭ এবং ৬.৪। এই দুর্যোগের কেন্দ্রস্থল ছিল মধ্য মায়ানমারে। যা মনিওয়া শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।

সিসিটিভি এবং ব্যক্তিগত স্মার্টফোন ক্যামেরায় ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার চিত্র ইতিমধ্যে দেখা গিয়েছে। এইসব ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিল্ডিং, দোকান এবং একটি মঠ ধসে পড়ছে এবং আতঙ্কিত মানুষ নিজেদের রক্ষা করার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছেন। ব্যাঙ্ককে ভূমিকম্পের জেরে কেঁপে ওঠে বাড়িগুলি। তবে মায়ানমারের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক অদ্ভুত দৃশ্য। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মাটি থেকে জল বেরিয়ে আসতে গল গল করে। কিন্তু কেন?

অনেকের মতে, শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে এলাকার জলের পাইপগুলি ভেঙে গিয়ে এই অবস্থা। এদিকে অনেকে আবার ভাবছেন, ভুপৃষ্ঠ থেকে এইভাবে জল বেরিয়ে আসা কি তবে মাটির তরলীকরণেরই প্রত্যক্ষ ফলাফল?

মাটির তরলীকরণ কী?
মাটির তরলীকরণ হলো এমন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, যার দরুন ভূমিকম্প বা অন্য কোনো আকস্মিক ঝাঁকুনিতে জল-সিক্ত আলগা বা নরম মাটি তার শক্তি ও দৃঢ়তা হারায় এবং তরলের মতো আচরণ করে। মাটির কণাগুলি অবাধে চলাচল করতে পারে, যার ফলে মাটি অস্থির হয়ে ওঠে। তরলীকরণের জন্য সংবেদনশীল মাটির উপর নির্মিত যেকোনও কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে, যার ফলে বিশেষ করে ভূমিকম্পের সময় ধ্বংসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আলগা মাটির উপর নির্মিত বিল্ডিংগুলি তরলীকরণের সময় সহজেই হেলে যায়, কারণ মাটি আর কাঠামোর ভিত্তি ধরে রাখতে পারে না। পলি-নুড়িযুক্ত এবং বালুকাময় দুর্বল মাটি যেখান থেকে জল নিষ্কাশন ঠিকভাবে হয় না। সেই মাটির তরলীকরণের প্রবণতা সবথেকে বেশি।

ভারতে অবস্থিত ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (এনসিএস) আরও উল্লেখ করেছে, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মায়ানমার এবং ব্যাঙ্ককে যে ধ্বংসলীলা হয়েছে তার মধ্যে মাটির তরলীকরণ অন্যতম প্রধান কারণ। সংস্থাটি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কম্পনের ফ্রিকোয়েন্সি বিল্ডিং এবং কাঠামোর প্রাকৃতিক কম্পনের সাথে মিলে গিয়েছে, যা অঞ্চলগুলিতে দেখা ধ্বংসযজ্ঞকে আরও বাড়িয়েছে।

ভূমিকম্পের কারণ কী?
মায়ানমারকে প্রায় মাঝামাঝিভাবে দ্বিখণ্ডিত করে উত্তর ও দক্ষিণে ১২০০ কিলোমিটার ধরে বিস্তৃত হয়েছে 'সাগাইং ফল্ট' বা সাগাইং চ্যুতিরেখা। এই দুই প্লেট এবং একটি ফল্ট লাইনের পারস্পরিক শত্রুতাতেই ভয়াবহ বিপর্যয় মায়ানমার। শুধু মায়ানমারকে নয়, দেশের দুদিকের দুই প্রতিবেশী ভারত এবং থাইল্যান্ডেরও বেশ কিছু এলাকায় ভূমিকম্প নিজের অস্তিত্ব জানিয়েছে।

আরএ/এসএন

Share this news on: