আগামিকাল মুক্তি পেতে চলেছে সলমন অভিনীত ছবি, ‘সিকান্দার’। সবচেয়ে বড় স্পেকট্রামে হওয়ার কথা ছিল এই ছবি।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আগামিকাল মুক্তি পেতে চলেছে সলমন অভিনীত ছবি, ‘সিকান্দার’। সবচেয়ে বড় স্পেকট্রামে হওয়ার কথা ছিল এই ছবি। কথা ছিল কারণ সমালোচকদের একাংশের মতে এই ছবিই সলমনের কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে চলেছে। ২০০ কোটি টাকার বিশাল বাজেটের ছবি। ম্যাগনাম ওপাস। কিন্তু এই ছবির ভবিষ্যৎ এত দ্রুত অবনতির পথে এগোচ্ছে যা কল্পনারও অতীত। ফিল্ম সমালোচকদের মতে যে পাঁচ কারণে ‘সিকন্দর’ বক্সঅফিসে ব্যর্থ হতে পারে, সে বিষয়ে বিশদে জানা প্রয়োজন।
অগ্রিম বুকিং—১৭,০০০ শোতে মাত্র ৫ কোটি! চারদিন আগে অগ্রিম বুকিংয়ের অপশন খোলা রয়েছে। ফলাফল? ১৭,০০০ শোতে মাত্র ৫ কোটি ঝুলিতে। এখানেই শেষ নয়। ভারতের অন্যতম সুপারস্টার সলমন খানের ছবি শুধুমাত্র ৫ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করতে পেরেছে! অতীত বলছে, একটি আঞ্চলিক ছবি কিংবা একটি কম বাজেটের বলিউড ছবি অ্যাডভ্যান্স বুকিংয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি অর্থলাভে সক্ষম থাকে। এটা কিন্তু একটা রেড অ্যালার্ট! শুক্রবারের প্রথাগতভাবে ছবি মুক্তির দিন। ‘সিকান্দার’ সেই দিনও এড়িয়ে গিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন সম্ভবত মুখ বাঁচাতেই সলমনের এই সিদ্ধান্ত। কারণ সলমন বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রথম দিনের বক্স অফিসে ‘সিকান্দার’-এর আয় হতো মাত্র ১৫ কোটি! যা ২০০ কোটি বাজেটের ছবির কাছে একটি হাস্যকর পরিসংখ্যান!
বয়স—সলমন দাঁড়িয়ে এখন প্রায় ৬০ বছর বয়সে। টপ অ্যাকশন হিরো হিসেবে সলমনের সময় ‘শেষ’। শারীরিক গঠন আর আগের মতো নেই। শুধু তাই নয়, সলমনের অভিনয় ভীষণভাবে রিপিটেটিভ এবং একঘেয়ে হয়ে উঠেছে। ‘ইমোশনাল’ বজরঙ্গী ভাইজানের দিন চলে গিয়েছে। এখন দর্শক একই ধরণের ক্লান্তিকর, একই ফর্মুলার স্ক্রিপ্ট, অ্যাকশন সিকোয়েন্সে আটকে থাকছে না। সমালোচকদের মতে, সলমনের অভিনয় যেমন একঘেয়ে, ঠিক তেমনই তাঁর নির্বাচিত স্ক্রিপ্ট।
গান—প্রীতমের গান ‘ব্যর্থ’! ছবিটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন বাঙালি সুরকার। কিন্তু পারেননি। প্রত্যেকটি ট্র্যাক আশাহত করেছে দর্শকদেক। ‘জোহরা জাবিন’, ‘বাম বাম ভোলে‘, এবং ‘ ‘সিকান্দার নাচে’—এই তিনটে গান শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হয়নি, ছবি মুক্তির আগেই দর্শকদের কাছে তারা সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য। কোনও প্রভাব পড়েনি। হতাশ হয়েছেন শ্রোতা। কেউ ছবির গান নিয়ে একটি কথাও বলছে না, এবং কেউ শুনছেও না। সলমন খানের ছবিতে এমন সব সাউন্ডট্র্যাক ছিল যা কি না ছবির পক্ষে ছিল অতিরিক্ত সুবিধা। তবে, এ ক্ষেত্রে ‘সিকন্দর’-এর গান বিপর্যয় ঘটিয়েছে!
মুরুগাদোস—এ.আর. মুরুগাদোস কোনওভাবে খুব কম ছবি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যা আদপে হিট ছিল, যেমন ‘গজনি’, এবং ‘হলি ডে’। অতীতের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন সলমন। ছবির নাম ছিল ‘জয় হো’। ছবিটি স্বল্পশ্রমের, পুনর্নির্মিত সংস্করণের মতো হয়েছিল। ‘সিকন্দর’ ট্রেলরেও মিলল তেমনই ছবি। সমালোচকদের মতে বেশ কয়েকটি অ্যাকশন সিকোয়েন্স, একটি ব্লেন্ডারে ফেলে দিয়েছে এবং তারপরে একটি পুরানো গল্পের উপর ‘প্লে’ টিপেছেন পরিচালক। ‘সিকন্দর’ নতুন কিছু উপস্থাপন করেনি, দর্শকরা পুনর্ব্যবহৃত প্লট এবং ক্লান্তিকর একই অ্যাকশন দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার ‘রিকভারি’ এখন দুঃস্বপ্ন— ‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’-এর পরাজয়ের পর, প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা এখন ‘সিকান্দার’ নামক দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হতে চলেছেন। অগ্রিম বুকিংয়ের সংখ্যা গুণে নাদিয়াদওয়ালা আরও এক বিশাল ক্ষতির সম্মুখে দাঁড়িয়ে। আরও একটি বিষয় হল, ছবিটি ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুঞ্জন নেই। ইতিমধ্যেই ‘সিকান্দার’কে, ভাল ছবির সস্তা অনুকরণ বলে মনে করছে সমালোচকরা। এমনিতেই দক্ষিণী ছবি এবং তারকাদের আধিপত্য বাড়ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে ‘সিকান্দার’-এর মতো ছবি এই নতুন যুগে প্রতিযোগিতার ট্র্যাকলাইনের ধারেকাছে নেই!
অনিবার্য ব্যর্থতা। বিপর্যয়। এবং ধারশায়ীর হওয়ার সমস্ত লক্ষণ রয়েছে ‘সিকান্দার’-এ। সমালোচকদের দাবি, প্রথম সপ্তাহে মাত্র ৩০ কোটি ঘরে তুলতে পারে ছবি। যা বিরাট স্কেলের একটি ছবির জন্য অপমানজনক! ঈদের পর, ছবিটির ভাগ্যরেখা উপরের দিকে যাবে না, নিশ্চিত ফিল্মক্রিটকদের একাংশর। কারণ এটি কাজবাজের সপ্তাহ। এবং সে কারণে ছবি দেখতে আসা দর্শকদের সংখ্যা কমে যাবে। এটাই কঠোর বাস্তব। বক্স অফিসে সলমন খানের রাজত্ব স্পষ্টতই শেষের দিকে। বলিউডে ‘খান’রা অপ্রাসঙ্গিক হতে শুরু করেছেন। ২০২৫ সালের ঈদ সলমন ভক্তদের জন্য দুঃখের হতে চলেছে, কারণ ব্যর্থ হওয়ার পথে দাঁড়িয়ে ছবি। এবং এর থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই।
এমআর