ফুটবলাররা ক্লাবে খেলে কাড়ি কাড়ি অর্থ উপার্জন করেন। সেই অনুপাতে জাতীয় দলে ফুটবলাররা যতসামান্য সুযোগ-সুবিধায় সম্মান ও দেশের জন্য খেলেন। জাতীয় দলে ফুটবলারদের সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন দেশের ফেডারেশনের সামর্থ্য ও নীতির উপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ফুটবলারদের সুনির্দিষ্ট কোনো ম্যাচ ফি নেই। জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকলে ফুটবলাররা ২০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। কিট (জার্সি, ট্র্যাকস্যুট) পেয়ে থাকলেও বুট অন্য সরঞ্জাম ফুটবলারদের নিজেদেরই ব্যবস্থা করতে হয়। জাতীয় দলের ক্যাম্পে ফুটবলাররা ইনজুরি হলে ফিফার ক্লাব প্রটোকশন স্কিমের আওতায় বাফুফে ফিফার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ অর্থ সংশ্লিষ্ট ক্লাবকে প্রদান করছে গত কয়েক বছর যাবত। এছাড়া আর তেমন কোনো সম্মানী বা বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা বাফুফে প্রদান করে না।
ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলা ফুটবলার হামজা চৌধুরি বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে তার অভিষেকও হয়েছে। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলায় হামজাকে বাফুফে কেমন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে এটা নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে কৌতুহল রয়েছে।
হামজা ম্যানচেস্টার থেকে বাংলাদেশে এসেছেন আবার বাংলাদেশ থেকে ম্যানচেস্টার গেছেন। ইংল্যান্ড-ঢাকা-ইংল্যান্ড বিমান টিকিট বাফুফে বিজনেস ক্লাসই প্রদান করেছে। লম্বা বিমান ভ্রমণে খানিকটা স্বাচ্ছন্দ্য হওয়ার জন্য বাফুফে হামজাকে ইংল্যান্ডে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে বিজনেস ক্লাস টিকিট দেবে এটাই আলোচনা হয়েছিল শুরু থেকে।
ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ যাতায়াত বিজনেস ক্লাসে করলেও হামজা ঢাকা থেকে শিলং এবং গৌহাটি থেকে ঢাকায় যাতায়াত করেছেন দলের অন্য সবার সঙ্গে ইকোনমিক ক্লাসেই। শিলংয়ে টিম হোটেলেও হামজা সাধারণ সিঙ্গেল রুমেই ছিলেন। টিম বাস ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও হামজা অন্য সবার মতোই সবার সঙ্গে মানিয়েই চলেছেন। ঢাকায় টিম হোটেলে হামজা চৌধুরী একটি সিঙ্গেল বিশেষ কক্ষ পেয়েছিলেন। সেটা ফেডারেশন নয়, হোটেল কর্তৃপক্ষ হামজাকে সম্মানার্থে দিয়েছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। শিলং থেকে ফিরে আসার পর জাতীয় দলের ক্যাম্প সমাপ্তি হলেও বাফুফে হামজার দেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত তাকে ব্যবস্থাপনায় রেখেছিল।
গাড়িতে ওঠার পর ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে ছবি তোলেন হামজা,বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার আমের খান হামজা চৌধুরী প্রসঙ্গে বলেন, 'হামজা অত্যন্ত অমায়িক মানুষ। এক সপ্তাহের মতো তিনি দলের সঙ্গে ছিলেন। বাড়তি কোনো চাহিদা বা অতিরিক্ত কোনো কিছুই তিনি কখনো চাননি। অত্যন্ত সাধারণভাবেই সবার সঙ্গে তিনি মিশেছেন এবং বিদ্যমান ব্যবস্থা-পরিস্থিতির সঙ্গেই দারুণভাবে মানিয়েছেন।'
২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দল এশিয়া কাপ বাছাইয়ের ভারত ম্যাচের জন্য ফুটবলাররা ক্যাম্প শুরু করেন। প্রায় এক মাস ক্যাম্প করলেও বাফুফে ফুটবলারদের হাতে ২০ হাজার টাকা সম্মানী এখনো তুলে দিতে পারেনি। হামজার ক্ষেত্রে সম্মানী কি অন্যদের মতো প্রায় ২০০ ডলার সমমান না আরো বেশি এটা বাফুফের জাতীয় দল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিশ্চিত করতে পারেনি। বিষয়টি বাফুফে সভাপতি ও জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়ালই বিশেষভাবে দেখছেন। তিনিও এই বিষয়ে কোনো কিছু প্রকাশ করতে চান না৷
হামজা বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলবেন। এই ঐতিহাসিক ম্যাচ দেখতে ইংল্যান্ড থেকে তার পরিবার এসেছে। হবিগঞ্জ থেকেও অনেকে শিলংয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। হামজার প্রথম ম্যাচ উপলক্ষ্যে বিশেষ সৌজন্যমূলক কিছু ব্যয় হয়েছে বলে জানা গেছে ফেডারেশন সূত্রে। এই ব্যয় ফেডারেশনের ফান্ড থেকে নাকি সভাপতি তাবিথ আউয়াল নিজেই বহন করছেন কিনা এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাফুফে সভাপতি বলেছিলেন হামজার সফরে ইউসিবির সহায়তা রয়েছে। ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির অনেকের ধারণা, বিজনেস ক্লাস টিকিট ও আনুষ্ঠানিক সৌজন্যমূলক মিলিয়ে ৫-৬ হাজার ডলারের মতো ব্যয় হয়েছে হামজার জন্য।
এমআর/এসএন