চট্টগ্রামে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা মামলা, হামলার ভয়ে মুক্তভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। এবারই মুক্ত পরিবেশে নির্ভয়ে প্রকাশ্যে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন তারা। এ জন্য তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন।
আজ সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে চট্টগ্রামের প্রধান ঈদ জামাত জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে একসঙ্গে শরীক হয়েছিলেন বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহে লাখো মুসল্লির সমাগম হয়েছে। নামাজ আদায়সহ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে পারিবারিক কিংবা সম্মিলিতভাবে নানা আনন্দ আয়োজনে বন্দরনগরীতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
বরাবরের মতো চট্টগ্রামে প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে।
সেখানে দু’দফা ঈদের নামাজে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষের সম্মিলন ঘটে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বিপুল সংখ্যক অধিক মুসল্লির সমাগম দেখা গেছে।
জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে প্রথম ঈদ জামাতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক অংশ নেন। একই জামাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী, তরুণ বিএনপি নেতা সাঈদ আল নোমান, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলার সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, সদস্য ফখরে জাহান সিরাজী, খুলশী থানার আমির মুহাম্মদ আলমগীর ভুইঁয়াসহ আরো অনেক নেতা সামনের কাতারে ছিলেন।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নগরীর উত্তর কাট্টলীতে নিজ বাড়ির মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন হাটহাজারীতে নিজ বাড়িতে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। নগর জামায়াতের নেতাদের মধ্যে চকবাজার প্যারেড মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন নায়েবে আমির আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন নগর জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, সদস্য জাকের হোসাইন। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন নগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ ও সদস্য আবু বকর ছিদ্দিক।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানে অনেক শহিদ হয়েছেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। এখন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে। আমরা আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে নির্বাচন হবে, মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবে। শহিদদের রক্ত বৃথা যাবে না।
এ বছর মানুষ মুক্ত পরিবেশে ঈদ করছে জানিয়ে মেয়র বলেন, গত ১৫ টি বছরের আনন্দ থেকে এবারের ঈদের আনন্দ ভিন্ন। কারণ গত ঈদগুলোতে একটা দল কিন্তু সমাজের একটা বিশাল অংশকে বিভিন্ন হামলা, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে ঈদ পর্যন্ত করতে দেয়নি। তাদের পরিবারে ঈদের কোনো আনন্দ ছিল না। কিন্তু আজ এ প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পেয়েছি যে সবাই মিলে ঈদ করছে। তারা কিন্তু নির্বিঘ্নে এবং নিশ্চিন্তে আজ ঈদ করছে। ঈদের এই পবিত্র আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, এবার আমরা স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে ঈদ করতে পারছি। যে ছাত্ররা শহীদ হয়ে দেশের মানুষকে স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্টের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে, তাদের স্মরণ করছি। এখন আমাদের সব ভেদাভেদ ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সবাই মিলেমিশে দেশ পুনর্গঠন করতে হবে।
প্রয়াত বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের সন্তান, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে প্রায় ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন মামলার কারণে আত্মগোপনে কিংবা কারাগারে ছিলেন চট্টগ্রামের বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতা। এবার ঈদুল ফিতরে মুক্ত পরিবেশে সকলেই ফিরেছেন নিজ নিজ এলাকায়। স্বজন-প্রতিবেশি, এলাকাবাসীর সঙ্গে আনন্দ আয়োজনে উদযাপন করছেন ঈদ।
ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে মুনাজাতে খতিব আলাউদ্দীন আল কাদেরী দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করেন। খতিবের মোনাজাতে শরিক হয়ে শুকরিয়া আদায় করেন ইমাম ও মুসল্লিরা। সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া কবুল ও ক্ষমা প্রার্থনা করে এসময় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
আরএ/এসএন