পানিতে ভেসে গেল উপকূলের ঈদ আনন্দ, ১৫ হাজার মানুষ বন্দি

ঈদের খুশির দিনে সাতক্ষীরা উপকূলে পানিতে ভেসে গেছে আনন্দ। আশাশুনি উপজেলার বিছট এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে আটটি গ্রাম। ঈদের দ্বিতীয় দিনেও বিকল্প বাঁধ নির্মাণ সম্ভব না হওয়ায় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন ১৫ হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে ২০০ বিঘা জমির ধান, ৪ হাজার বিঘার অধিক চিংড়ি ঘেরসহ প্রায় ৮ শতাধিক বসতবাড়ি।

এর আগে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) পৌনে ৯টার দিকে সাতক্ষীরা বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশ থেকে খোলপেটুয়া নদীর ২০০ ফুট এলাকাজুড়ে বেড়িবাঁধ হঠাৎ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে টানা দুই দিন ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী, চেঁচুয়া, কাকবসিয়া, পারবিছুট ও বাসুদেবপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণ হিসেবে স্থানীয়রা দাবি করেন, মৎস্য ঘেরে লবণ পানি প্রবাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপন করায় বেড়িবাঁধের নিচের মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলে এই ভাঙনের সৃষ্টি।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আশাশুনি উপজেলা টিম লিডার আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা যখন নামাজরত অবস্থায় ছিলাম, তখন হঠাৎ শুনি যে বাঁধ ভেঙে গেছে। আমরা মোনাজাত না করেই ছুটে যাই। গ্রামবাসী মিলে অস্থায়ীভাবে বাঁধ রক্ষা করতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু দুপুরের জোয়ারের পর সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।’

তিনি বলেন, ‘মূল যে পয়েন্টটি ভেঙেছে, সেটাতে একটি পাইপলাইন ও গেট সিস্টেম ছিল। যতগুলো ভাঙন পয়েন্ট রয়েছে, সবগুলোই পাইপলাইনের কারণে হয়েছে। এখন যদি আমরা এ পাইপলাইন বসানো বন্ধ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটবে।’

তিনি বলেন, ‘পানিবন্দি মানুষ এখন খাবার সংকটে পড়েছে। অনেক পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ শুরু করলেও এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।’

আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বাঁধ ভেঙে প্রবল জোয়ারের পানি গ্রামগুলোর ২০০ বিঘা জমির ধান ও ৪ হাজার বিঘার অধিক চিংড়ি ঘের তলিয়ে দিয়েছে। প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ বাড়িঘর পানির নিচে ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানুষ এখন দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ভাঙনের পরপরই গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিকল্প রিং বাঁধ তৈরির চেষ্টা করলেও, প্রবল জোয়ারের তোড়ে সেই বাঁধও ধসে পড়ে। ফলে নতুন করে আরও বেশি এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে।
আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করছি, সামনে আমাদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। কারণ মাত্র একদিনের ব্যবধানে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। দুপুর ও রাতের জোয়ারের কারণে ভাঙন আরও গভীর হয়েছে। বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, ইউএনও, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু শুধু উপস্থিত থাকলেই হবে না, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে বলগেট (বালু ও মাটি বহনের জাহাজ) প্রয়োজন। একটি বলগেট এসেছে, তবে এটি দিয়ে কতক্ষণ কাজ চালানো সম্ভব? আমরা আশা করছি, রাতারাতি আরও চারটি বলগেট আসবে, তারপর পুরোপুরি কাজ শুরু হবে। তবে এ ধরনের ভাঙন রোধ করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ঈদের কারণে শ্রমিক সংকট ও বালু বোর্ড আনতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। আমি সকালেই ঘটনাস্থলে এসে দেখেছি, পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা যদি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারি, তাহলে পরবর্তী জোয়ারে আরও প্রায় আধা কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগকে একত্রে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা আমাদের সহযোগিতা করছেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছি।’

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বোনকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ দেবশ্রী রায় Jul 10, 2025
img
পাক প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের গুঞ্জন, অস্বীকার করল সরকার Jul 10, 2025
img
মেসির ছায়া হয়ে থাকতে চাই না, নিজের পথে হাঁটতে চাই: ইয়ামাল Jul 10, 2025
img
“নাক ঠিক করার পরই বলিউডে আত্মপ্রকাশ”, প্রিয়াঙ্কার অতীত তুলে ধরলেন সুনীল Jul 10, 2025
img
নাইজেরিয়ায় সেনা অভিযানে প্রাণ গেল ৩০ জনের Jul 10, 2025
img
রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার চিন্তা করছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ? Jul 10, 2025
img
আমির-কিরণের বিচ্ছেদেও অটুট বন্ধুত্বের বন্ধন Jul 10, 2025
img
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ Jul 10, 2025
img
এসএসসি ২০২৫: নকল করে বহিষ্কার ৭২১ শিক্ষার্থী Jul 10, 2025
img
বিএনপি জুলাই অভ্যুত্থানকে খাটো করে দেখতে চায় না : মির্জা ফখরুল Jul 10, 2025
img
বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু হতে চায় চীন: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী Jul 10, 2025
img
যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন হওয়ায় পাস ও জিপিএ-৫ কমেছে: আন্তঃশিক্ষা বোর্ড Jul 10, 2025
img
সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না: নাহিদ ইসলাম Jul 10, 2025
img
বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেফতার আরও ১২৮৪ Jul 10, 2025
img
‘প্রতীকের’ তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি Jul 10, 2025
img
আজ চীন সফরে যাচ্ছেন জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল Jul 10, 2025
img
ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ Jul 10, 2025
img
শততম জন্মদিনে শুভেচ্ছায় ভাসছেন মাহাথির Jul 10, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানালেন মির্জা ফখরুল Jul 10, 2025
img
৭১ ছিলো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, জুলাই আমার অস্তিত্ব, আমার স্বাধীনতা Jul 10, 2025