টিএসএমসি উন্মোচন করল বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ২ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির মাইক্রোচিপ

বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ২ ন্যানোমিটার (২ এনএম) প্রযুক্তির মাইক্রোচিপ ১ এপ্রিল উন্মোচন করেছে তাইওয়ানের মাইক্রোচিপ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান টিএসএমসি। এই চিপটি ডিভাইসের কর্মক্ষমতা এবং দক্ষতায় বিপুল পরিবর্তন আনতে সক্ষম, যা প্রযুক্তি খাতে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এর ব্যাপক উৎপাদন শুরু হবে, যা প্রযুক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে মাইক্রোচিপ। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রিক টুথব্রাশসহ বিভিন্ন ডিভাইসে চিপ ব্যবহৃত হয়। এই চিপগুলো সিলিকনসহ বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে হয়। এসব চিপে মাইক্রোস্কোপিক সার্কিটের মধ্যে অসংখ্য ট্রানজিস্টর থাকে। এই ট্রানজিস্টরগুলো হচ্ছে ছোট ছোট সুইচ, যা বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কম্পিউটারকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। সাধারণত, একটি চিপে যত বেশি ট্রানজিস্টর থাকে, এটি তত দ্রুত গতির এবং শক্তিশালী হয়।


মাইক্রোচিপ নির্মাতারা আরও ছোট জায়গায় আরও বেশি ট্রানজিস্টর অন্তর্ভুক্ত করতে চান। এর মাধ্যমে ডিভাইসগুলো আরও দ্রুত গতির, শক্তিশালী এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে।

পূর্ববর্তী সবচেয়ে উন্নত চিপ, যা ৩ ন্যানোমিটার (৩ এনএম) প্রযুক্তি নামে পরিচিত। এই ৩ এনএম চিপের তুলনায় টিএসএমসির ২ ন্যানোমিটার প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেবে। অর্থাৎ একই পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার করে কম্পিউটিং গতি ১০ শতাংশ–১৫ শতাংশ বৃদ্ধি।


এ ছাড়া, ২ ন্যানোমিটার চিপে ট্রানজিস্টরের ঘনত্ব ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ফলে, ডিভাইসগুলো দ্রুততর কাজ করতে পারবেস এবং কম বিদ্যুৎশক্তি খরচ করে আরও জটিল কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করবে।

তাইওয়ানের মাইক্রোচিপ শিল্প দেশটির নিরাপত্তার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এটিকে কখনো কখনো ‘সিলিকন শিল্ড’ নামে অভিহিত করা হয়। কারণ, এর ব্যাপক অর্থনৈতিক গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোকে তাইওয়ানকে রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করে। বিশেষ করে চীনের আক্রমণের আশঙ্কা থেকে।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচটি নতুন কারখানা নির্মাণের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে টিএসএমসি। তবে, এটি নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, ২ এনএম চিপের উৎপাদন তাইওয়ানের বাইরে হলে দেশটির নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় টিএসএমসি এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাইক্রোচিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এটি বিশ্বের ‘চিপ শিল্পের’ বাজারের ৬ শতাংশ দখল করে রেখেছে, যার অধিকাংশই টিএসএমসির কারণে।

এ ছাড়া, অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য চিপ উৎপাদন করে টিএসএমসি। যেমন এটি অ্যাপলের ‘এ’ সিরিজ প্রসেসর, এনভিডিয়ার গ্রাফিকস প্রসেসর, এএমডির রাইজেন এবং ইপিওয়াইসি প্রসেসর এবং কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর তৈরি করে।

২০২০ সালে টিএসএমসি তার ৫ এনএম প্রযুক্তি চালু করেছিল, যা স্মার্টফোন এবং উচ্চ কার্যক্ষমতা কম্পিউটিংয়ের (এইচপিসি) ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দুই বছর পর ৩ এনএম প্রযুক্তি চালু হলে আরও উন্নত কর্মক্ষমতা এবং শক্তির দক্ষতা পাওয়া যায়।

অ্যাপলের ‘এ’ সিরিজের প্রসেসর এই চিপ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

২ এনএম চিপ প্রযুক্তি স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেটের কর্মক্ষমতা এবং ব্যাটারির জীবন উন্নত করতে পারে। যার ফলে ডিভাইসগুলো আরও ছোট এবং হালকা হবে, তবে আরও কার্যকরী হবে।

এই চিপের শক্তি এবং দক্ষতা এআইভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন, যেমন—ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, রিয়েল-টাইম ভাষা অনুবাদ এবং স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার সিস্টেমে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

ডেটা সেন্টারগুলোতে শক্তি খরচ কমানোর পাশাপাশি প্রসেসিং ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে পরিবেশের কম ক্ষতি হবে। স্বয়ংক্রিয় গাড়ি এবং রোবটিকসের মতো খাতে এই নতুন চিপ প্রযুক্তি ব্যবহার নিরাপত্তা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সহায়তা করবে। এর ফলে প্রযুক্তিগুলো ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

তবে, ২ এনএম চিপ প্রযুক্তি সফল হলেও এটি কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এর মধ্যে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো উৎপাদনের জটিলতা। ২ এনএম চিপ উৎপাদন করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যেমন এক্সট্রিম ইউভি (ইইউভি) লিথোগ্রাফি ব্যবহার করতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

এদিকে ট্রানজিস্টরের ঘনত্ব বাড়ানোর কারণে তাপ ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। অতিরিক্ত তাপ চিপের কর্মক্ষমতা এবং টেকসইতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া, সিলিকনের মতো ঐতিহ্যবাহী উপকরণ হয়তো তাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যাবে। ফলে নতুন উপকরণের সন্ধান প্রয়োজন হতে পারে।

তবে, ২ এনএম চিপ প্রযুক্তির উন্নয়ন নতুন যুগের প্রযুক্তির দ্বার উন্মোচন করবে, যা আরও শক্তিশালী, পরিবেশবান্ধব এবং নিখুঁত ডিভাইস তৈরি করতে সাহায্য করবে।

এফপি/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৬ অঞ্চলে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস, নৌবন্দরে হুঁশিয়ারি সংকেত Nov 05, 2025
img
খাগড়াছড়িতে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে ১৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান Nov 05, 2025
img
ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন আবিগেইল স্প্যানবার্জার Nov 05, 2025
img
আজ ৫ নভেম্বর ইতিহাসের আলোচিত যত ঘটনা Nov 05, 2025
img
দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে : খৈয়ম Nov 05, 2025
img
এয়ারবাসের জন্য সমান সুযোগ চান ইউরোপের ৪ (ইইউ) কূটনীতিক Nov 05, 2025
img
এক ফোন কলেই বদলে যায় সালমান শাহর ভাগ্য! Nov 05, 2025
img
জাতীয় নির্বাচনের পর ঢাকায় আসতে পারেন জাকির নায়েক Nov 05, 2025
img
এনসিপি পরনির্ভরশীল রাজনীতি করতে আসেনি : সারজিস Nov 05, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে ১টি কার্গো বিমান বিধ্বস্ত, চলছে উদ্ধার অভিযান Nov 05, 2025
img
আজ টানা ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায় Nov 05, 2025
img
চাঁদপুরে পাসপোর্ট করতে এসে আটক ২ রোহিঙ্গা নারী Nov 05, 2025
img
ইলহান ওমরকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বললেন ট্রাম্প Nov 05, 2025
img

সারজিস আলম

দেশে আর যেন স্বৈরাচার না আসে, এজন্য জুলাই সনদের পক্ষে ভোট দিন Nov 05, 2025
img
জকসুর তফসিল ঘোষণা আজ Nov 05, 2025
img
৬৩৬ বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণের খনির সন্ধান পাকিস্তানে Nov 05, 2025
img
সুনীল ছেত্রীকে ছাড়াই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে আসছে ভারত Nov 05, 2025
img
রোনালদো ও মেসির সমান হওয়া কঠিন, স্বীকারোক্তি হলান্ডের Nov 05, 2025
img
বিএনপির মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতার স্লোগান! ভিডিও ভাইরাল Nov 05, 2025
img
বাংলাদেশের দিকে শোষণের দৃষ্টিতে কেউ তাকাতে পারবে না: সারজিস আলম Nov 05, 2025