গাজায় আপাতত ত্রাণ যাবে না : ইসরায়েলের সেনাবাহিনী

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও অন্যান্য জরুরি ত্রাণ সরবরাহ আপাতত স্বাভাবিক হচ্ছে না।

সোমবার (৭ এপ্রিল)  দুপুরে এ ইস্যুতে একটি বিবৃতি জানানো হয়েছে এ তথ্য।
 
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা কখনও হামাসের কাছে কোনো ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করব না। এমন কোনো পরিকল্পনাই আমাদের নেই। আইডিএফ ইসরায়েলের রাজনৈতিক সরকারের প্রতি অনুগত এবং সরকারি নেতৃত্বের নির্দেশনা অনুসারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নেতৃত্ব থেকে নির্দেশনা পেলে এ ইস্যুতে আইডিএফ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।”

সম্প্রতি ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ইয়েনেত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, আগামী সপ্তাহ থেকে গাজায় ত্রাণ সামগ্রীর সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে আইডিএফ। সোমবারের বিবৃতিতে এ তথ্য প্রত্যাখ্যান করে আইডিএফ বলেছে, ইয়েনেতের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন এবং অসত্য।

এদিকে একই দিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বর্তমানে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে গাজায় আটকে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের উদ্ধারসহ যুদ্ধের অন্যান্য লক্ষ্য পূরণকে গুরুত্ব দিচ্ছে আইডিএফ। আপাতত এই ব্যাপারটিতেই আমরা মনযোগ দিচ্ছি।”

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। ওই বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।

জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল।

বিরতির আগ পর্যন্ত গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো জরুরি ত্রানের সরবরাহ অনিয়মিত হলেও মোটামুটি মাত্রায় পৌঁছেছে। ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির পর ১৭ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২ মাসে প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দিয়েছে ইসরায়েল।

তবে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে গাজায় আর ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

ইসরায়েলের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত দু’মাসে বেশ কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক লুটপাট করেছে হামাসের যোদ্ধারা এবং ইসরায়েলের কাছে এ সংক্রান্ত প্রমাণও রয়েছে।

“আমরা এমন একটি পাইলট প্রকল্প চাইছি, যার মাধ্যমে গাজায় হামাসকে এড়িয়ে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো যায়। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত কাজও শুরু হয়েছে তবে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়নি,” ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টকে জানান ওই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, গাজার বাসিন্দাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরাসরি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল।

আইডিএফের নিষ্ঠুর অভিযানে গত ১৮ মাসে গাজায় ইসরায়েলি গোলাগুলির আঘাতে নিহত হয়েছেন ৫০ হাজার ৭ শতাধিক মানুষ। তবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের মতে গত ১৮ মাসে খাদ্য ও ওষুধের অভাবেও মারা গেছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। সেই হিসেবে গাজায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

এসএম

Share this news on: