প্রতিবাদ মিছিলের ভিড়ে কারা ভাঙচুর-লুটপাট করল?

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল থেকে দেশের আট জেলায় ইসরায়েলি পণ্য রাখা ও বিক্রি করার অভিযোগ তুলে অন্তত ১৬টি রেস্তোরাঁ ও শো-রুমে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার পরপরই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন এবং যারা এই ভাঙচুরের সাথে জড়িত দ্রুত তাদের গ্রেফতারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৭ মার্চ) দুপুরের দিকে কক্সবাজারে পাঁচটি, চট্টগ্রামে তিনটি, সিলেটে পাঁচটি, গাজীপুরে চারটি, বরিশালে, খুলনায়, কুমিল্লায় একটি এবং বগুড়ায় একটি প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে এসব হামলার ঘটনায় কোনো হতাহতের সংবাদ নেই।

এদিন রাতে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় মিছিল থেকে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেনি। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুলিশ প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি নিয়মিতভাবে পুলিশ নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষুব্ধ মানুষেরা ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসি, পিৎজা হাট, বাটার মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের শো-রুমে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি কোমল পানীয় কোকাকোলা, সেভেন আপ রাখায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানও হামলার শিকার হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

গাজায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার প্রতিবাদে সোমবার বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জেলায় জেলায় শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল, স্লোগান-সমাবেশ ও ধর্মঘট পালন করেন।

সকাল থেকে সারা দেশের জেলা-উপজেলা শহর ছিল প্রতিবাদমুখর। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যার যার অবস্থান থেকে পথে নেমে এসে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন, মিছিলে স্লোগান তুলেছেন।

এ বিষয়ে বিবৃতিতে বাটা বলেছে, “আমরা আমাদের দোকানে আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমাদের অনেকগুলো দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে ও মালামাল চুরি করা হয়েছে। একটি স্বনামধন্য বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে এই ধরনের আচরণ নিন্দনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক। বর্তমানে আমরা এসব ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করছি। ”

এদিকে পুলিশ প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, খুলনা, সিলেট, কক্সবাজার, কুমিল্লাসহ বেশ কিছু স্থানে ভাঙচুর ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে নির্দেশনা অনুযায়ী যারা হামলা চালিয়েছে তাদের শনাক্ত করে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লুটপাট ও ভাঙচুরের সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয়, পুলিশ নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। তবে যারা এই ভাঙচুর ও লুটপাট এর সাথে জড়িত তারা অবশ্যই সুযোগসন্ধানী, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

দেশের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ মিছিল থেকে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।

সোমবার (৭ এপ্রিল) এমন নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ আছে। তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে, অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশ বর্তমানে এ নিয়ে কাজ করছে।

অন্যদিকে সোমবার দিবাগত গত রাত ১২টা পর্যন্ত সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটে জড়িত তিন যুবককে আটক করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।

এসএম

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বেঙ্গালুরুর কাছে হেরে যা বললেন হার্দিক Apr 08, 2025
img
ফোনে বিজ্ঞাপনী মেসেজ আসা বন্ধ করবেন যেভাবে Apr 08, 2025
img
৯ বছর অডিশনের পর বলিউডে অভিষেক হচ্ছে গোবিন্দপুত্রের Apr 08, 2025
img
কারিনা সাংঘাতিক মেয়ে, সাইফকে সতর্ক করেছিলেন অক্ষয়? Apr 08, 2025
img
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ই মেট গালার লাল গালিচায় হাঁটবেন কিয়ারা Apr 08, 2025
img
সিলেটে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আটক ১০ Apr 08, 2025
img
সুদীপ-পৃথার বিচ্ছেদ, ভবিষ্যতেও এক ছাদের নিচে থাকার সিদ্ধান্ত Apr 08, 2025
img
শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ৩৩ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ Apr 08, 2025
img
ইসরায়েলকে এআই সহায়তার প্রতিবাদে চাকরি ছাড়লেন মাইক্রোসফটের এক নারী কর্মী Apr 08, 2025
img
হে আল্লাহ, আবার আবাবিল পাখির ভীষণ প্রয়োজন: ওমর সানী Apr 08, 2025