‘এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে দিতে পারব, তবে সময় লাগবে’

প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে পারব। তবে সময় লাগবে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

ড. খলিলুর রহমান বলেন, আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বিমসটেককে একটি গতিশীল সংস্থা হিসেবে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া সেটা আমরা আলোচনা শুরু করেছি। আরাকান আর্মির সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া এটা তাদের একটা প্রিন্সিপাল পজিশন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আলোচনা হয়েছে। এবারে আলোচনায় আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সে কারণে আমরা মনে করি, এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত আমরা করতে পারব, তবে সময় লাগবে।
তিনি বলেন, এটা তো কালকে হচ্ছে না, যাতে দ্রুত সময়ে যেতে পারবে সেই প্রচেষ্টায় থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে, আগামী ইফতার (আগামী বছর রমজান) তারা দেশে গিয়ে করবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।

ড. খলিলুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কাজ করতে হবে। এজন্য আরাকান রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। যুদ্ধাবস্থায় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। এজন্য সে দেশে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হতে হবে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা দরকার। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া আগুনে ফেলে দেওয়ার শামিল।

প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ বলেন, মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছয়টি কিস্তিতে আমরা যে ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলাম, সেই তালিকা থেকে তারা দুই লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা রিভিউ করেছেন। তার মধ্যে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে আইডেন্টিফাই করেছেন। যারা মিয়ানমার থেকে এসেছেন। বাকি ৭০ হাজার রোহিঙ্গার ছবি এবং নাম নিয়ে কনফিউশন আছে। সেটা দূরীকরণের জন্য আমরা দুই পক্ষই আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাব। বাকি ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার রিভিউ তারা দ্রুত শুরু করবেন।

তিনি আরও বলেন, এক লাখ ৮০ হাজার... যাদের ক্লিয়ার করা হয়েছে তারা তো কালকেই যাচ্ছেন না। যাওয়ার জন্য একটা প্রক্রিয়া লাগে। যেকোনো প্রত্যাবাসনের একটা প্রক্রিয়া আছে। তারা কী করে যাবেন, যেখানে যাবেন সেখানকার কী অবস্থা আছে? ওখানে তানরা যে যাবেন তাদের জীবন-জীবিকা, কর্মসংস্থান আছে কি না, শুধু রোহিঙ্গা নয় সব প্রত্যাবর্তনে এই ধরনের বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা যখন একটা ভালো কাজ করতে গেছি, হঠাৎ করে কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেগুলো আমাদের ভালো কাজগুলো ডিনাই করার একটা প্রচেষ্টা বলে আমাদের এখন ধারণা হচ্ছে। এটা একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ইসরায়েলির কর্মকাণ্ডে সারা বিশ্বের বিবেক ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের তার প্রতিক্রিয়াও একই। খুব স্বাভাবিক। আমার কাছে সবচাইতে বেদনাদায়ক যেটা মনে হয়, আমাদের ঘাড়ের ওপর একটা গাজা বসে আছে— রোহিঙ্গা। সেটা নিয়ে কারো মিটিং মিছিল নেই। সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা নেই। আছে শুধু এগুলো নিয়ে, রাস্তা নামা, লুটপাট করা, এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। পৃথিবীর সব নির্যাতিত মানুষের পাশে বাংলাদেশ আছে। স্বাধীনতার সময় মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়, এটা সব সময় মেটাতে হবে। কিন্তু আমাদের ঘাড়ের ওপর তো একটা সমস্যা বসে আছে। আমার খুব লজ্জা লাগে। যখন বাইরের দেশ আমাকে জিজ্ঞেস করে, তোমার দেশে তো রোহিঙ্গা নিয়ে কোন কথাবার্তা নেই। তোমার অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলো।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
টিএ/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মুসিয়ালার ইনজুরিতে শোকাহত বায়ার্ন শিবির, কোচের ক্ষোভ Jul 06, 2025
img
বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি ও নতুন এক্সপোর্ট টার্মিনাল নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে : কৃষি উপদেষ্টা Jul 06, 2025
img
বাসায় ফিরলেন সেই 'নিখোঁজ' ব্যাংক কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত কারণে গিয়েছিলেন কুয়াকাটায় Jul 06, 2025
img
ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহের পাশাপাশি হতাশাও রয়েছে: মির্জা ফখরুল Jul 06, 2025
img
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লাগামহীন লুটপাট আওয়ামী লীগ আমলের এক বড় নির্দেশক: আসিফ মাহমুদ Jul 06, 2025
img
মস্কোর দিকে আসা চারটি ড্রোন ভূপাতিত, বিমান চলাচল স্থগিত Jul 06, 2025
img
মালয়েশিয়া থেকে যাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা কোনো জঙ্গি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 06, 2025
img
হজযাত্রা শেষে দেশে ফিরেছেন ৬৬ হাজারের বেশি হাজি Jul 06, 2025
img
জুনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি Jul 06, 2025
img
"ভারতীয় গল্পকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দেওয়াই ‘রামায়ণ' নির্মাণের লক্ষ্য" Jul 06, 2025
img
বিয়ে না করেই মা হওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত দক্ষিণী অভিনেত্রীর! Jul 06, 2025
img
সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য রাজনৈতিক সৌজন্যবোধের পরিপন্থি: ইসলামী আন্দোলন Jul 06, 2025
img
রোগী সেজে চেম্বারে ঢুকে অভিনেত্রী তানিয়ার বাবাকে গুলি Jul 06, 2025
img
যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে ফের কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাবেন নেতানিয়াহু Jul 06, 2025
img
যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাবেন নেতানিয়াহু Jul 06, 2025
পাওয়ারফুল চারটি আমল Jul 06, 2025
১০ জনের দলে যৌন হয়রানি'-এনসিপিকে ইঙ্গিত করে রুমিন ফারহানার তীর্যক মন্তব্য Jul 06, 2025
img
স্বপ্নপূরণে শ্রীলঙ্কার কোকোনাট হিলে শবনম ফারিয়া Jul 06, 2025
জামানত হারানোর শঙ্কায় থাকা দলগুলোই পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চায়: সালাহউদ্দিন আহমেদ Jul 06, 2025
img
হাসিনার পতনের পেছনে কাজ করেছে মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ পলিসি: গোলাম মাওলা রনি Jul 06, 2025