চলতি বছরেই ৬০-এ পা দিচ্ছেন আমির, সালমান, শাহরুখ, বলিউডের কি এখন নতুন তারকা প্রয়োজন?

প্রযোজক ও চলচ্চিত্র বিশ্লেষক গিরিশ জোহরের ভাষায়, সম্প্রতি বিভিন্ন ঘরানার ছোট বাজেটের সিনেমা দর্শকের মন জয় করেছে—যেমন ‘মুঞ্জিয়া’, ‘লাপাতা লেডিস’। তাতে এটা পরিষ্কার, ভালো গল্পই এখন মূল শক্তি।

বর্তমানে এক ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারতী চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। গত কয়েক বছরে বড় বাজেটের বাণিজ্যিক ব্লকবাস্টার সিনেমাগুলোর সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

এদিকে প্রতি বছর ঈতে সালমান খানের মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র নিয়ে দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ থাকে এবং বছরের অন্যতম বড় হিটও হয় এটি। গত ১৫ বছরে তার ১৮টি চলচ্চিত্র ১০০ কোটি রুপির বেশি আয় করেছে।

তবে এখন যেহেতু নির্মাণ খরচ অনেক বেশি, তাই প্রত্যেক তারকাই ৩০০ কোটি রুপির বেশি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন।

কিন্ত দুর্ভাগ্যবশত, এ বছর তার ঈদে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র 'সিকান্দার' সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। ভারতে মুক্তির ৯ দিনে চলচ্চিত্রটি কেবল ১০০ কোটি রুপির ঘর অতিক্রম করেছে।

এদিকে ২০২২ সালে 'লাল সিং চাড্ডা' ব্যর্থ হওয়ার পর আর কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি দেননি আমির খান। তবে এ বছর তিনি 'সিতারে জমিন পার' দিয়ে নিজের অবস্থান ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে, শাহরুখ খান চার বছরের বিরতির পর ২০২৩ সালে 'পাঠান' ও 'জওয়ান' দিয়ে জোরালোভাবে কামব্যাক করেছিলেন, তবে ২০২৫ সালে তার কোনো সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তিন খান মিলে গত কয়েক দশকে বলিউডের বিকাশ ও সাফল্যে বিশাল ভূমিকা রেখেছেন। তবে সাম্প্রতিক প্রবণতা বলছে, এখন আর শুধু তারকাখ্যাতি দিয়ে বক্স অফিসে সফল হওয়া সম্ভব নয়। গত কয়েক বছরে দর্শকদের রুচি বদলে গেছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উত্থান এবং আঞ্চলিক সিনেমার প্রসার দর্শকদের সামনে বৈচিত্র্যময় ও উচ্চমানের কনটেন্ট এনে দিয়েছে। পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে দর্শকরা এখন অনেক বেশি সচেতন এবং প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে দ্বিধা করে না।

এই পরিবর্তনের ফলে, এখন দর্শকরা টানটান গল্প, নতুন ধারার বিষয়বস্তু এবং বাস্তবধর্মী অভিনয় দেখতে চায়। ফলে, বলিউডের পরিচিত ছকবাঁধা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র আর আগের মতো কাজ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে, বড় বড় তারকার উপস্থিতিও আর ব্লকবাস্টার নিশ্চিত করতে পারছে না।

এখানেই প্রশ্ন উঠছে—বলিউডকে টিকিয়ে রাখতে ও এগিয়ে নিতে কি এখন নতুন তারকা ও তরুণ প্রতিভার দরকার?

প্রযোজক ও চলচ্চিত্র বিশ্লেষক গিরিশ জোহর এ বিষয়ে একমত হয়ে বলেন, "নিঃসন্দেহে আমাদের আরও তারকার প্রয়োজন। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তিন খান ছাড়াও হৃতিক রোশন, অজয় দেবগণ ও অক্ষয় কুমার আছেন, তবে পরবর্তী প্রজন্ম থেকে অনেক তারকাকে উঠে আসতে হবে। বর্তমানে আমাদের রয়েছে রণবীর কাপুর, যিনি সামনের সারিতে রয়েছেন, তার পরে রণবীর সিং এবং ভিকি কৌশলও ভালো সাড়া দিচ্ছেন। কিন্তু দর্শকদের আবার প্রেক্ষাগৃহমুখী করতে আরও তরুণদের তারকাখ্যাতি অর্জন করা প্রয়োজন।"

তিনি আরও বলেন, "ভালো দিক হলো, মহামারির পর ভাষার সীমারেখা অনেকটা মুছে গেছে এবং দর্শকরা এখন ভালো গল্প দেখতেই আগ্রহী। আমার মতে, গল্প বা কনটেন্ট নিজেও একটি 'তারকা' হয়ে উঠতে পারে। 'মুঞ্জিয়া' ও 'লাপাতা লেডিস' এর উদাহরণ। এখন যেহেতু বলিউডে তারকার ঘাটতি রয়েছে, তাই আমরা দেখছি অনেক দক্ষিণী সিনেমা হিন্দি অঞ্চলেও ভালো চলেছে। তাই আমি আশা করছি, হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আবার নতুন তারকা তৈরি করতে পারবে।"

গিরিশ জোহরের ভাষায়, সম্প্রতি বিভিন্ন ঘরানার ছোট বাজেটের যেসব সিনেমা দর্শকের মন জয় করেছে—যেমন 'মুঞ্জিয়া', 'লাপাতা লেডিস', '১২তম ফেল', 'স্ত্রী ২' বা 'ভুল ভুলাইয়া ৩'—তাতে এটা পরিষ্কার, ভালো গল্পই এখন মূল শক্তি।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা জোর দিয়ে বলছেন, ভালো গল্প বলার ক্ষমতা এবং শক্তিশালী নির্মাণ এখন সিনেমার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—আজকের দিনে কি আমাদের তারকার দরকার, নাকি দরকার ভালো কনটেন্ট আর দক্ষ নির্মাতার? কারণ, সালমান-আমির-শাহরুখের মতো বড় তারকারা বলিউডে রয়েই গেছেন। কিন্তু বলিউডকে টিকিয়ে রাখতে এখন দরকার গল্পের জোর ও ভালো নির্মাণ।

ইউএফও মুভিজ-এর পঙ্কজ জয়সিং বলেন, "পর্দার পেছনের দল—যেমন লেখক, সম্পাদক ও পরিচালক—পর্দার সামনের দলের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। যদি সেই পেছনের দলটা শক্তিশালী হয়, তাহলে তারকারা বাড়তি আকর্ষণ যোগ করতে পারেন। কিন্তু যদি সেটা না হয়, তাহলে তারকাদের গুরুত্বও কমে যায়।" তিনি আরও বলেন, "সম্প্রতি যেসব ছোট বাজেটের চলচ্চিত্র ব্লকবাস্টার হয়েছে, সেখানে কনটেন্টই ছিল রাজা।"

আগের দিনে যশ রাজ ফিল্মস ও আরকে ফিল্মস গল্পনির্ভর সিনেমা তৈরি করত এবং নতুন তারকাদের পরিচয় দিত। পঙ্কজ জয়সিং বলেন, "তাদের সিনেমা বাণিজ্যিকভাবে সফল হোক বা না হোক, গল্প ও অভিনয়ের মান সবসময়ই প্রশংসিত ছিল।"

আজ ধর্ম প্রোডাকশনের করণ জোহরের হাত ধরে নতুন মুখ চলচ্চিত্রে আনলেও সেখানেও রয়েছে বিতর্ক। তিনি তা মূলত স্টার কিডদেরই চলচ্চিত্রে আনছেন। যার কারণে 'নেপোটিজম' বিতর্কে সেই প্রতিভা অনেক সময়ই অন্ধকারে চাপা পড়ে যায়।

বর্তমানে যখন দক্ষিণী সিনেমা ও প্যান-ইন্ডিয়ান তারকারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং দর্শকরা গল্পনির্ভর কনটেন্টের দিকে ঝুঁকছে, তখন বলিউডের দরকার নতুন মুখ ও খাঁটি প্রতিভা। বড় নাম বা পারিবারিক পরিচয় দিয়ে আর সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। বরং ভালো গল্প ও নতুন প্রতিভাই এখন দর্শক টানছে। বলিউডের পুরোনো জৌলুস হয়ত কিছুটা হারিয়েছে, তবে যদি কনটেন্ট ও বৈচিত্র্যপূর্ণ নতুন প্রতিভায় বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে বলিউড আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সরাইলে চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটুনি, গ্রেফতার ১ Apr 18, 2025
img
শিল্পী সংঘ নির্বাচন : ২১ পদে ৪০ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা Apr 18, 2025
img
মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা খুন, যুবক গ্রেফতার Apr 18, 2025
img
দেশপ্রেম ছাড়া কোনো জাতি টিকে থাকতে পারে না : ধর্ম উপদেষ্টা Apr 18, 2025
যে মেশিনের মাধ্যমে জীবানু দূর হয় Apr 18, 2025
বাংলাদেশকে নি''পী''ড়নের ছায়া থেকে টেনে আনছেন ড. ইউনূস Apr 18, 2025
ওয়াক্ফ আইন ঘিরে ভারত-বাংলাদেশে উ''ত্তে''জ''না Apr 18, 2025
img
বাংলাদেশ মিশনগুলোতে সরকার জনবল বাড়াবে Apr 18, 2025
সিলেটে স্টাম্প উ"ড়ে ফেললেন এনগারাভা: বোলিং দেখে করতালি দিলেন মুজারাবানি! Apr 18, 2025
img
পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে তৈরি বস্ত্রের প্রসারে কাজ করতে হবে : রিজওয়ানা হাসান Apr 18, 2025