খাগড়াছড়িতে বসবাসরত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসু’ আজ (১৩ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে। গঙ্গা পূজা এবং নারীদের ঐতিহ্যবাহী কাপড় রিনাই-রিসা নদীতে ভাসিয়ে উৎসবের সূচনা করেন ত্রিপুরারা।
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন ছড়া-খালে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে পূজা করেন নারী-পুরুষরা। দলবদ্ধ হয়ে রঙিন পোশাকে নানা বয়সের ত্রিপুরা মানুষ এই আয়োজনে অংশ নেন। বৈসু উৎসব তিন দিনব্যাপী উদ্যাপন করা হয়, যা হারি বৈসু, বৈসুমা এবং বিসি কাতাল নামে পরিচিত।
উৎসবের প্রথম দিন গঙ্গা পূজা দিয়ে শুরু হয়, এরপর পরিবারের পক্ষে সাধ্যানুযায়ী পাজনসহ বিভিন্ন খাবার রান্না করা হয়। গ্রামজুড়ে চলে গরয়া নৃত্য পরিবেশনা ও অতিথি আপ্যায়ন। বছর শেষ দিনে নিরামিষ খাওয়া হলেও পরদিন থেকে আমিষসহ নানা আয়োজন থাকে।
উৎসবে অংশ নেওয়া স্মৃতি ত্রিপুরা বলেন, “ত্রিপুরাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসু। গঙ্গা দেবীর পূজা দিয়ে আমরা উৎসব শুরু করি, বড়দের প্রণাম করি, আত্মীয়-পরিজনের বাড়ি বেড়াতে যাই।”
অন্যজন সাগরিকা ত্রিপুরা বলেন, “আজ গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি যেন আগামী বছর সবার মঙ্গল হয়।”
মিনু ত্রিপুরা জানান, “নতুন কাপড় তৈরি করে নদীতে ভাসিয়ে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করি, যাতে ভালো ফুলের নকশা তৈরি করতে পারি।”
জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক নাজমুন আরা সুলতানা জানান, “এবার খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্যভাবে বৈসাবি উৎসব পালিত হচ্ছে। সবাই ভয়ভীতিহীনভাবে উৎসব করছে।”
এদিকে, একইদিন চলছে চাকমা সম্প্রদায়ের বিঝু উৎসবের দ্বিতীয় দিন ‘মূল বিঝু’, যেখানে ঘরে ঘরে অতিথি আপ্যায়ন করা হচ্ছে। পাজনসহ ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন থাকছে প্রতিটি বাড়িতে।
আগামীকাল শুরু হবে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব। এই উৎসবের মূল আকর্ষণ ‘জলকেলি’ বা পানি খেলা, যা খাগড়াছড়িতে বসন্ত উৎসবের সবচেয়ে রঙিন ও প্রাণবন্ত পর্ব হিসেবে পরিচিত।
এইভাবে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি অঞ্চলে বসন্তকে কেন্দ্র করে একে একে উদযাপিত হচ্ছে তিন সম্প্রদায়ের তিন রঙিন উৎসব—বৈসু, বিঝু এবং সাংগ্রাই, যা একত্রে পরিচিত ‘বৈসাবি উৎসব’ নামে।
এসএস/এসএন