হুথি নিয়ন্ত্রিত হোদেইদা পুনর্দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইয়েমেন সরকার

ইয়েমেনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার পশ্চিমাঞ্চলীয় হোদেইদা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে শুক্রবার জানানো হয়েছে, প্রায় ৮০ হাজার সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে হুথি নিয়ন্ত্রিত এই বন্দর শহরে আক্রমণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবে অবস্থিত গালফ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. আবদুলআজিজ সাগের বলেন, আমার ধারণা অনুযায়ী, ইয়েমেনি সরকার হোদেইদা দখলের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ৮০ হাজার সৈন্য প্রস্তুত করছে।

এই বিপুলসংখ্যক সৈন্য ইয়েমেনে হুথি বিরোধী সব সেনাবাহিনীর বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং এটি হবে গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। একইসঙ্গে, এটি হুথিদের দখলে থাকা রাজধানী সানা’য় ভবিষ্যৎ আক্রমণের মঞ্চ তৈরি করবে।

বিমান হামলার মাধ্যমে প্রস্তুতি
‘দ্য ন্যাশনাল’ নামের আমিরাতি পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, হুদেইদাসহ বিভিন্ন হুথি লক্ষ্যবস্তুতে সম্প্রতি চালানো বিমান হামলা আসন্ন অভিযানকে সহজ করার ভূমিকা রাখছে। এসব হামলায় হুতিদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার নিহত হওয়ার খবরও প্রকাশ পেয়েছে।হোদেইদা বন্দরটি ইয়েমেনের অন্যতম প্রধান বন্দর এবং যুদ্ধ শুরুর আগে খাদ্য আমদানির প্রধান উৎস ছিল।

মার্কিন সহায়তা

সাগের জানান, সম্প্রতি সৌদি আরবে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিলার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সগীর হামুদ আহমেদ আজিজ। এই বৈঠক ও কুরিলার মধ্যপ্রাচ্য সফরকে তিনি আসন্ন অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইয়েমেন সরকারকে বিমান সহযোগিতা ও ড্রোন নজরদারিতে সহায়তা দেবে।

ড. সাগের বলেন, আমরা হয়তো হুথিদের শেষ অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিয়ে ইয়েমেনকে এই দুর্দশা থেকে রক্ষা করার সুযোগ তাদের ছিল।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, হোদেইদায় নতুন করে সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে পারে।

জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ ও স্টকহোম চুক্তির প্রেক্ষাপট

এর আগে ২০১৮ সালের অভিযানে ইয়েমেন, সৌদি ও আমিরাতি জোট হোদেইদা ঘিরে ফেলেছিল এবং হুথিদের রসদ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমাজ চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হুদেইদা নিয়ে স্টকহোম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার ও মানবিক করিডোর খোলার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের মধ্যেই হুতিরা চুক্তি লঙ্ঘন করে শহরে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী মোতায়েন করে এবং ২০২১ সালে পুরো হোদেইদা পুনর্দখল করে নেয়।

ড. সাগের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নতুন অভিযানও আন্তর্জাতিক চাপ ও সহায়তা সংকটের মুখে পড়বে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক তহবিল হ্রাসের কারণে একটি মানবিক বিপর্যয় ঠেকানো আরও কঠিন হতে পারে।

ইয়েমেনের এই সম্ভাব্য অভিযান যুদ্ধের গতি পরিবর্তনের পাশাপাশি এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের আশঙ্কাও উস্কে দিচ্ছে।

 এফপি/এস এন

Share this news on: