বাঙালির পয়লা বৈশাখ মানেই নস্ট্যালজিয়া। পোশাক থেকে খাবার, আড্ডা থেকে হালখাতা, সবেতেই থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। তবে আজকের বাঙালি কি ততটাই উন্মুখ থাকে নববর্ষ নিয়ে? অতীতের স্মৃতিচারণা এবং এবারের নববর্ষের পরিকল্পনা গণমাধ্যমকে জানালেন মিমি চক্রবর্তী।
মা ছোটবেলায় বলতেন, নতুন বছরে তুমি যা করবে, সারাবছর সেরকমই চলবে। তাই কাজ দিয়ে শুরু করাটাই আমার মনে হয়, সবথেকে ভালো। আর কাজ মানেই আমার কাছে ‘হ্যাপি প্লেস’।
এবারের পয়লা বৈশাখে আমার ‘রক্তবীজ ২’-এর শুটিং রয়েছে। সেটেও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। নববর্ষে খাওয়াদাওয়া আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পয়লা বৈশাখ বলে নয়, আমি বরাবরের খাদ্যরসিক। কিন্তু যেদিন থেকে নিরামিশাষী হয়ে গিয়েছি, সেদিন থেকে অবশ্য আমার খুব একটা খাওয়া হয় না। অগত্যা মিষ্টিটাই এখন আমার কাছে সবথেকে প্রিয়। নতুন বছরের শুরুয়াত হোক মিষ্টি দিয়েই। বছরভর মিষ্টি কাটুক, এই কামনা রাখি। আমি যেহেতু পোলাও খেতে খুব ভালোবাসি। তাই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বাড়িতে পোলাও রান্না হবে।
তাছাড়া প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে আমাদের বাড়িতে পুজো হয়। ছোটবেলা থেকেই সেই রীতি দেখে আসছি। এদিন আমাদের বাড়ির সব ঠাকুররাও নতুন জামাকাপড় পরেন। শুধু নিজেরাই নতুন পোশাক পরলেই হবে? এছাড়াও মরশুমের প্রথম ফল ওনাকেই উৎসর্গ করা হয়। সারাবছর কাজের সূত্রে তো সকলের তেমন একসঙ্গে হওয়া হয় না। তাই পয়লা বৈশাখে সবাই একজোট হওয়ার চেষ্টা করি।
আমার অবশ্য এবছর সারারাত শুটিং রয়েছে। আর এদিন তো নতুন জামাকাপড় পরা মাস্ট! আমাদের বাড়িতে নববর্ষ উপলক্ষে একটা চল রয়েছে। সেটা হল একে-অপরকে উপহার দেওয়া।
বিশেষ করে, যাঁদের হয়তো এই উৎসব, অনুষ্ঠানের দিনে নতুন জামাকাপড় কেনার সামর্থ নেই, তাঁদের জন্যই কেনাকাটিটা হয় বেশি। ছোটবেলা থেকে বাড়িতে মা-বাবাকে এই রীতি পালন করতে দেখে এসেছি। আমিও সেটাই করি। আমার দিদা বলতেন- শুধু নিজে খুশি থাকলেই হয় না। অন্যকে খুশি রাখাটাও একটা দায়িত্ব। আর নববর্ষে এটা ম্যান্ডেটারি। যাতে তুমি সারাবছর নিজের আনন্দে অন্যকেও শামিল করতে পারো। আমার মনে হয়, এই দায়িত্বটা সবাই নিতে পারেন না। এটা ঈশ্বরপ্রদত্ত। উনি কোনও একজনকে দায়িত্ব দেন, চারপাশের মানুষগুলোকে খুশি রাখার। এটাও একপ্রকার নববর্ষের রেজলিউশন। আমি চেষ্টা করি বছরভর সেটা পালন করার।
মনে পড়ে, ছোটবেলায় জলপাইগুড়িতে এই দিনটায় মা-বাবার সঙ্গে হালখাতা করতে যেতাম। এছাড়াও সারাদিনটা সব আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে হইহই করে কাটত। দিদু আমাদের সবাইকে নতুন জামা দিতেন। আর ওই নতুন জামা পরেই পুজোয় বসতাম। আমার মামার যেহেতু নিজের হোলসেল মুদিখানার দোকান রয়েছে। কাজেই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পুজো হত। তাই সকাল সকাল মামার দোকানে পৌঁছে যেতাম। আমার দায়িত্ব ছিল, তরমুজ কাটা।
কখনও কখনও আবার ফলফলারি সাজিয়ে রাখা। আর যত মিষ্টি আসত, সেগুলো প্যাকেট করার দায়িত্ব পড়ত আমার আর দিদিভাইয়ের উপর। বাক্সে দেওয়ার আগে অবশ্য বেশিরভাগ নিজেই খেয়ে ফেলতাম! আর ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করতাম। কে কতগুলো কালেক্ট করলাম, সেটা রীতিমতো কম্পিটিশন হত। মনে পড়ে, হলুদ রঙের প্যাকেটে রকমারি লাড্ডু, দরবেশ আসত।
রাত্রিবেলা ভাইবোনেরা জড়ো হয়ে দেখতাম কে, কতগুলো, কোন লাড্ডু সংগ্রহ করতে পারল। দারুণ মজার স্মৃতি। আশেপাশের গ্রাম থেকে আমন্ত্রিত অনেকে আসতেন। পয়লা বৈশাখে কেউ যেন মিষ্টিমুখ না করে যান, সেদিকটা বরাবর নজরে থাকত বাড়ির বড়দের। নতুন বছর সকলের ভালো কাটুক, এটাই কাম্য।
এসএম/টিএ