নিম্মি— নামটা যেন সাদা-কালো রঙের ফ্রেমে বাঁধা এক রূপকথার নায়িকা। জীবনের শুরুটা ছিল কঠিন, কিন্তু তবুও হার মানেননি তিনি। স্কুলের পথে পা রাখার আগেই জীবনের কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর। ছোটবেলাতেই মাকে হারিয়েছিলেন। বাবাও আলাদা পরিবারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। বাধ্য হয়ে ঠাঁই নিয়েছিলেন দিদার কাছে, পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে। ভাগ্যের এক অদ্ভুত খেলায় দেশভাগের পর আবার ফিরলেন ভারতে। তখন তাঁর আশ্রয় হল মুম্বইয়ের চলচ্চিত্রপাড়ায়।
নিম্মির জীবনের গল্প সিনেমার চেয়েও রঙিন। বাইজি মা ওয়াহিদান, যিনি নিজেও অভিনয় করতেন, তাঁর সূত্র ধরেই সিনেমার জগতে প্রবেশ করেন নবাব বানো, যিনি পরে হয়ে উঠলেন ‘নিম্মি’। একদিন মেহবুব খানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন আন্দাজ ছবির সেটে। রাজ কাপুরের চোখে তখন নতুন মুখ খোঁজার তীব্র তাড়া। আর সেখানেই নিম্মিকে দেখে থমকে গিয়েছিলেন তিনি। প্রস্তাব দিয়েছিলেন ‘বারসাত’ ছবিতে অভিনয়ের। প্রেমনাথের বিপরীতে সেই ছবিতেই বলিউডে আত্মপ্রকাশ ঘটল নিম্মির।
এরপর একের পর এক ছবিতে নজর কাড়েন তিনি— ‘দিদার’, ‘আন’, ‘উদন খাটোলা’, ‘কুন্দন’, ‘বসন্ত বাহার’। তাঁর অভিনয়ে ছিল আবেগের গভীরতা, সহজাত মাধুর্য। ‘আন’ ছবির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি পান তিনি। এমনকি হলিউড থেকেও এসেছিল কাজের প্রস্তাব। কিন্তু চুম্বন ও ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থাকায় তা গ্রহণ করেননি। নীতির সঙ্গে আপস করার কথা ভাবেননি কখনও।
তবে সব গল্পেই তো একটা মোড় থাকে। নিম্মির ক্ষেত্রেও তা-ই হল। ‘মেরে মেহবুব’ ছবিতে প্রধান চরিত্রের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বেছে নিলেন গৌণ চরিত্র— রাজেন্দ্র কুমারের বোন। পরিচালক বারবার বোঝালেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন তিনি। সেই সুযোগে প্রধান চরিত্রে এলেন সাধনা, যাঁর কেরিয়ার এরপর আকাশছোঁয়া হয়। আর নিম্মি? ধীরে ধীরে আলো থেকে ছায়ায় সরে যেতে থাকেন।
তবে ব্যক্তিগত জীবনে খুঁজে পেয়েছিলেন শান্তির ছোঁয়া। লেখক এ. আলি রাজার সঙ্গে বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে— সহজ-সরল জীবনের গল্পটা গড়েছিল আরেকটা পরিপূর্ণ অধ্যায়।
২৫ মার্চ ২০২০ সালে, ৮৮ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া কাটান নিম্মি। কিন্তু রেখে যান এমন এক স্মৃতি, যেটা সাদাকালো পর্দা পেরিয়ে রয়ে গেছে বহু দর্শকের হৃদয়ে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন, সংগ্রামই আসল পরিচয় গড়ে তোলে। আর কখনও কখনও, সিনেমার বাইরেও জীবনের গল্পই সবচেয়ে বড় সিনেমা হয়ে ওঠে।
এফপি/টিএ