বাণিজ্য যুদ্ধ সত্ত্বেও চীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির জন্য এখন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছে চীন।


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যেও চীনের অর্থনীতি প্রথম প্রান্তিকে, অর্থাৎ বছরের প্রথম তিন মাসে ৫.৪ শতাংশ বেড়েছে, যা তাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে বছরের বাকি অংশে দেশটির অর্থনীতির সম্ভাবনা কিছুটা ম্লান হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন এখন শুল্ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে এবং এর ফলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি গতি কিছুটা ধীর হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং তার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোতে সফরের অংশ হিসেবে এখন মালয়েশিয়ায় আছেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ছাড়া বাকি সব দেশের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। অন্যদিকে অন্য দেশগুলো উচ্চ শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিবিসি এশিয়ার বিজনেস রিপোর্টার সুরঞ্জনা তেওয়ারি লিখেছেন, চীন কিছুক্ষণ আগেই এসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ হতে পারে ধারণা করেছিলেন। বেইজিং বলছে, এই প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৫.৪ শতাংশ বেড়েছে।

এটি এমন সময় হলো, যখন চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ১৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এর জেরে কারখানা সম্প্রসারণসহ এসংক্রান্ত কার্যক্রমের গতি ধীর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বেইজিংয়ের লক্ষ্য হলো বছর জুড়ে পাঁচ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছাড়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমাসহ নানা কারণে প্রবৃদ্ধির এই প্রত্যাশা কিছুটা উচ্চাভিলাষী।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট স্টোরের বড় বিক্রেতাদের একজন লিওনেল জু। তার কম্পানি মশা প্রতিরোধী কিটস বিক্রি করে।

এখন তার পণ্য চীনেই এক গুদামে পড়ে আছে। ট্রাম্প ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে যুক্তরাষ্ট্রগামী এসব চীনা পণ্য এভাবেই পড়ে থাকবে।

জু বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য কঠিন। আমরা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প যদি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করেন। এটা হবে আমাদের কারখানার জন্য বিপজ্জনক।’

এ ছাড়া কাছেই এমি একটি কম্পানির জন্য আইসক্রিম তৈরির সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। তার গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতাদের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এর মধ্যেই উৎপাদন বন্ধ করেছি। সব পণ্যই পড়ে আছে গুদামে।’

গুয়াংজুর বাণিজ্য কেন্দ্রের একটি মেলায় প্রতিটি বুথেই এখন এমন গল্প শোনা যায়। প্রায় ৩০ হাজার ব্যবসায়ী বার্ষিক এই মেলায় যোগ দিতে এসেছেন। সেখানে বিভিন্ন প্রদর্শনী হলগুলোতে তাদের পণ্য প্রদর্শন করছেন তারা। বিবিসিকে জু বলেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন ক্রেতাকে নিয়ে মধ্যাহ্নভোজে যাচ্ছেন। এরা এসেছে দরকষাকষি করে দাম কিছুটা কমানোর আশা নিয়ে। তবে জু আশা করেন, এক-দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া বলেছে, চীনে এইচ২০ এআই চিপ রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে তার কারণে কম্পানিকে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার বা ৫৫০ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

সংস্থাটি মঙ্গলবার বলেছে, গত ৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের জানিয়েছে, চীনে পণ্য রপ্তানি করতে হলে তাদের লাইসেন্সের দরকার হবে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর কথা উল্লেখ করে এনভিডিয়াসহ অন্য এআই চিপ নির্মাতাদের চীনের রপ্তানির ওপর চাপ তৈরি করেছে। সম্প্রতি এনভিডিয়া যুক্তরাষ্ট্রেই কিছু এআই চিপ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণার পরই নতুন করে আরো বিধি-নিষেধ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম ছয় শতাংশ দাম কমেছে।

সিঙ্গাপুর থেকে বিবিসির বিজনেস রিপোর্টার আনাবেলে লিয়াং লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানিকে খরুচে করে তোলে শুল্ক। চীনে ব্যবসার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে শুল্ক দাঁড়িয়েছে ১৪৫ শতাংশে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয়তো পণ্যের দাম বাড়াতে হবে বা বাড়তি শুল্ক নিজের বহন করতে হবে। অথবা উভয় পথই বেছে নিতে হবে।

এগুলোর ফলে তাদের মুনাফা কমবে, যা অর্থনীতিতে তাদের অবদান কমিয়ে আনবে। এর ফলে প্রবৃদ্ধি কমে আসতে পারে। কারণ দেশটির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি রপ্তানির ওপরই নির্ভরশীল।

এ ছাড়া উচ্চশুল্ক বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক সম্পর্কিত ঘোষণাগুলোর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে অর্থ বাজারগুলোতে। তবে আজ চীন জিডিপির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিফলন ঘটেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, মে-জুন নাগাদ এর প্রভাব পরিষ্কার হবে।

আরআর/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশের আকাশে আজ কালো মেঘের ঘনঘটা: হাসনাত আব্দুল্লাহ Jul 10, 2025
img
এনসিপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ফের ককটেল বিস্ফোরণ Jul 10, 2025
img
শাপলা যদি প্রতীক না হতে পারে তাহলে ধানের শীষও পারবে না: সারজিস আলম Jul 10, 2025
img
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট Jul 10, 2025
img
আমাদের আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটারের সংকট আছে: লিপু Jul 10, 2025
img
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্তে ৯ কেজি রুপা জব্দ Jul 10, 2025
img
১৫ বছর আগের থেকে অনেক বেশি যোগ্য ও পরিবর্তিত তারেক রহমান: মান্না Jul 10, 2025
img
সুন্দরবনকে অপরাধমুক্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশ Jul 10, 2025
img
১৮ জুলাই বিনামূল্যে ১ জিবি ইন্টারনেট দিচ্ছে সরকার Jul 09, 2025
img
টি-টোয়েন্টি দলে সাইফউদ্দিনকে নেওয়ার কারণ জানালেন অধিনায়ক লিটন Jul 09, 2025
img
বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে বাংলাদেশ Jul 09, 2025
img
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডিসি-এসপি পদে রদবদল হবে Jul 09, 2025
img
ইলন মাস্কের এক্সের প্রধান নির্বাহীর পদত্যাগের ঘোষণা Jul 09, 2025
img
সরকারি দপ্তরে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফর বন্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা Jul 09, 2025
img
আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে: প্রেস সচিব Jul 09, 2025
img
নির্বাচনে সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে ভোটকেন্দ্র Jul 09, 2025
img
পলক কান্না করেননি, কান্না হয়ে গেছে: ইলিয়াস Jul 09, 2025
img
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত Jul 09, 2025
img
আমাদের জন্য কঠিন সিরিজ হবে : আসালাঙ্কা Jul 09, 2025
img
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বৃহস্পতিবারের আলিম পরীক্ষা স্থগিত Jul 09, 2025