ছয় দফা দাবি আদায়ে দিনের বড় অংশজুড়ে সড়ক অবরোধের পর এবার রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ’রেল ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবেন তারা। বুধবার সন্ধ্যায় এ ঘোষণার পর দিনভর চলতে থাকা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
রাজধানীতে বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পর বেলা ১১টায় কারওয়ান বাজার রেলগেইটে ব্লকেড করার কর্মসূচির কথা রাত সাড়ে ৯টার পরে গণমাধ্যমকে বলেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রিফাত আহমেদ শান্ত।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ ইনস্টিটিউটের আরেক শিক্ষার্থী রমজান বলেন, অবরোধ কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ‘রেল ব্লকেড’ এর নতুন কর্মসূচি দেওয়া হয়।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাত রাস্তা মোড়ে ব্রিফিংয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারি বলেন, “আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা দেশব্যাপী রেল ব্লকেড ঘোষণা করলাম। এ দেশের সংস্কারে, জাতির সংস্কারে কারিগরি শিক্ষার্থীদের ভূমিকা যদি আপনারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন, এ দেশের উন্নয়ন কখনই সম্ভব না।
“আজকের মত (বুধবার) আমাদের কর্মসূচি আমরা এখান থেকে প্রত্যাহার করলাম।”
একই ইনস্টিটিউটের আরেক শিক্ষার্থী মাশরিক বলেন, “আজকে সারা বাংলাদেশব্যাপী পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা এ অসহযোগ আন্দোলন চালিয়েছে। সরকার পক্ষে আমাদের অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করতে হবে এবং দ্রুত দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট একযোগে দাবি আদায়ে রেলপথ অবরোধের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে, যোগ করেন তিনি।
দাবি ও কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বা আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কারিগরি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়সমিন রাতে বলেন, "আমরা সারাদিনই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা সাড়া দেননি।
“তাদের সঙ্গে দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা করা ছাড়া তো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।"
এ বিষয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান রাতে বলেন, “আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা নানাভাবে আলোচনার চেষ্টা করছি, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি; কিন্তু তারা বুঝতেই চাচ্ছেন না।“
এর পেছনে ’অন্য কেউ’ রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তারা মোটিভেটেড বাই আদারস। তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন চক্রের ইন্ধনে এমনটা করছেন। একটা নিয়োগ বিধি তো চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না, এর জন্য সময় লাগে। কিন্তু এজন্য দিনভর সাত রাস্তা অবরোধ করে রাখা কাম্য নয়।"
এর আগে বুধবার সকাল থেকে ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে একযোগে তারা নামায় রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোগান্তিতে ছিল পুরো নগরী।
দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে কয়েক জায়গায় সড়কে ফুটবলও খেলেছেন তারা। তবে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়ক ছেড়ে যাননি তারা। পরে নতুন কর্মসূচি দিয়ে অবরোধ তুলে নেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল–
>> জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের প্রমোশনের হাই কোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা। ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা এবং মামলার প্রধান কারিগর ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
>> ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদী অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।
>> উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছাত্রদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা দেওয়া।
>> কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্ব/নিয়োগ দেওয়া।
>> কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সকল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সকল শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।
>> ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাস করতে হবে এবং বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।
এফপি/এস এন