বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক বর্তমানে কিছুটা উষ্ণ থাকলেও দুই দেশের ইতিহাস অনেক গভীর। যেখানে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে অনেকটা শত্রু অবস্থায় বিরাজ করত দুই দেশের মাঝে। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম ও নির্মম অত্যাচার সহ্য করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও হারাতে হয়েছিল বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ।
তবে এবার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে হারানো বা ছিনিয়ে নেওয়া সেসব অর্থসম্পদ ফিরিয়ে আনার। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও যেন এক অসমাপ্ত হিসাবের খাতা খুলতে বসেছে বাংলাদেশ।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক পরিবেশে দীর্ঘ ১৫ বছর পর ঢাকায় হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-পকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। আর বৈঠকের টেবিলে আলোচনায় থাকবে ৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এক দাবি, যা হচ্ছে ১৯৭১ সালের আগে অবিভক্ত পাকিস্তানে জমে থাকা বাংলাদেশের সম্পদ ফেরত চাওয়া।
এমন দাবি সামনে উঠে আসার শুরুটা হয়েছিল অনেক আগেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিন ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধাঙ্গনে অস্থিরতা বিরাজ করছিল, তখনই বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন হিসেব কষে বলে দিয়েছিল, পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানি সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ ৯০ লাখ টাকা আটকে রেখেছে। এরপর রুপালী ব্যাংকের করাচি শাখায় থাকা আরো ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকাও ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
এবার পুরনো সেই দাবি শুধু টাকার হিসাব রূপে নয়, ওই দাবি একটি জাতির সঙ্গে অন্য এক জাতির অসম আচরণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭০ সালে ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের পর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন তহবিল থেকে প্রায় ২০ কোটি ডলার এসেছিল ঢাকায়। তবে অবাক করার বিষয়টি হচ্ছে, তহবিলের সেই টাকা ঢাকায় থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তা পাকিস্তানের লাহোরে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। আর যুদ্ধ শেষের ৫০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সেই টাকা এখনো ফেরত দেয়নি পাকিস্তান।
এবার সেই মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরের সবকিছুর ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে ৪.৫২ বিলিয়ন ডলারের একটি তালিকা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সমান। এই তালিকার প্রতিটি তথ্য নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন দলিল থেকে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হিসেব ধরেই তৈরি করেছে একটি সুগঠিত দাবিপত্র। যেখানে সবকিছুর প্রমাণ আছে, হিস্যা আছে, আছে ইতিহাসও।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে অবিভক্ত পাকিস্তানের মোট সম্পদের ৫৬ শতাংশই বাংলাদেশের হওয়া উচিত ছিল। আর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ওই আমলে পূর্ব পাকিস্তানের ভূমিকা ধরলে এই হিস্যা দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশ। এছাড়া, শুধু ন্যায্যতার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের দাবি কমপক্ষে ৫০ শতাংশ। ‘স্টেটমেন্ট অফ বাংলাদেশ ব্যাংক, ক্লেইমস রিসিভেবল ফ্রম স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান এন্ড গভর্মেন্ট অফ পাকিস্তান’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে এসব হিসাব-নিকাশের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ফলে আজ ১৭ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এই পাওনা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জোরালোভাবে জানানো হবে বলেই জানা গেছে।
এসএম/টিএ