মিষ্টি মেয়ের চলে যাওয়ার ৪ বছর আজ

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন কবরী। তার পরিবারে তাকে মীনা পাল নামে ডাকা হতো। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্যপ্রভা পালের কন্যা কবরী বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রাম শহরেই। ১২ জন ভাইবোনের মধ্যে একেবারেই আলাদা ছিলেন তিনি। নাচে-গানে ও অভিনয়ে ছিলেন অতুলনীয়।

চিত্রনায়িকা কবরীর মিষ্টি হাসির সাথে পরিচিত নন এমন মানুষ কমই আছেন। এই হাসিতে আজও বুঁদ হয়ে আছেন এদেশের সিনেমাপ্রমীরা। তারা ভালোবেসে তাকে নাম দিয়েছেন ‘মিষ্টি মেয়ে’। মিষ্টি হাসি দিয়ে বাঙালির হৃদয়হরণ করেছিলেন তিনি। ফলস্বরূপ দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার অর্জিত জনপ্রিয়তা মেপে দেখা কারও পক্ষে সম্ভব না।

কিশোরী বয়সেই চলচ্চিত্রে নাম লেখান কবরী। নির্মাতা সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ (১৯৬৪) ছিল তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র। সুভাষ দত্ত তার নতুন ছবির জন্য নায়িকা খুঁজছিলেন। সেসময় মীনা পালকে নায়িকা হিসেবে মনে ধরে তার। এভাবেই ‘সুতরাং’ সিনেমার মাধ্যমে পর্দায় পা রেখে মীনা পাল হয়ে যান কবরী।

এরপর কয়েক দশকের ক্যারিয়ারে কবরী দর্শকদের উপহার দিয়েছেন—‘হীরামন’, ‘ময়নামতি’, ‘চোরাবালি’, ‘বিনিময়’, ‘পারুলের সংসার’, ‘আগন্তুক’, ‘সারেং বউ’, ‘সুজন সখী’, ‘দুই জীবন’, ‘দেবদাস’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘লালন ফকির’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘বেইমান’, ‘রংবাজ’-এর মতো জনপ্রিয় ছবি।

রাজ্জাক-কবরী জুটি সিনেমাপ্রেমীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। পর্দায় তাদের রসায়ন হল ভর্তি দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখত। এই জুটি সফল সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘রংবাজ’সহ অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমা। তাদের জুটিকে বাংলা সিনেমার সেরা জুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্দায় অভিনয়ের ছাপ রেখেছেন কবরী। ভারতের কিংবদন্তি নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দর্শক হৃদয়ে এখনও দাগ কেটে আছে। এছাড়া জহির রায়হানের নির্মিত উর্দু ভাষার সিনেমা ‘বাহানা’তেও তার অভিনয় প্রশংসিত হয়।

কাজের স্বীকৃত হিসেবে অর্জন করেছেন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরুস্কার। ১৯৭৮ সালে ‘সারেং বউ’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। এরপর ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে কবরীকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।

কবরীর দেশের প্রতি টান ছিল অগাধ। সেই টান থেকেই ১৯৭১ সালে তিনি ঝাপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। সেসময় দেশের প্রতি জনমত গড়ে তুলতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সভা-সমাবেশ করেছেন এই নায়িকা। পাকবাহিনীর নৃশংসতার বর্ণনা তুলে ধরেছিলেন বিশ্ববাসীর সামনে।

শুধু চলচ্চিত্র নয়, কবরী একজন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত। অভিনেত্রীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পাশাপাশি নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রীর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন কবরী। বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে দিনটি। সব আছে শুধু মিষ্টি মেয়েটি নেই। তবে শারীরিকভাবে না থাকলেও তিনি রয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। থাকবেন অনন্তকাল।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তিন দফা দাবিতে কাঁথা-বালিশ নিয়ে জবি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে অবস্থান Apr 20, 2025
img
ফিফা চাইলে ৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজন করতে রাজি সৌদি আরব Apr 20, 2025
img
সিরাজগঞ্জে মামা-মামি-বোনকে হত্যার দায়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ড Apr 20, 2025
img
নববধূ রেখাকে জুতাপেটা করে বরণ করেছিল শাশুড়ি Apr 20, 2025
img
নগরীর যানজট নিরসনে হকার ব্যবস্থাপনা জরুরি : চসিক মেয়র Apr 20, 2025
img
আজ খারাপ খেলেছি তাই বলা যাবে না তারা চেষ্টা করছে না : সালাউদ্দিন Apr 20, 2025
img
নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত নারী চিকিৎসক দিয়ে কেন নয় প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল জারি Apr 20, 2025
img
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিপুর ৪৫ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, গাড়ি-এ্যাপার্টমেন্ট জব্দ Apr 20, 2025
img
চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ২ হাজার বছরের পুরোনো : ঢাবি উপাচার্য Apr 20, 2025
img
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নতুন ডিজি শফিউল বারী Apr 20, 2025