ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামীকাল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর সারা দেশের সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একযোগে ‘কাফনের কাপড়’ মাথায় বেঁধে গণমিছিল করবে শিক্ষার্থীরা।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান কার্যনির্বাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী গণমিছিলের এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আমরা আর আশ্বাসে নয়, বাস্তবায়নে বিশ্বাসী। আজকের বৈঠকেও কোনো সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত আসেনি। তাই আমরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনের পথে।”
এর আগে বুধবার (১৭ এপ্রিল) রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করে বৃহস্পতিবার শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠকে অংশ নেয় শিক্ষার্থীদের ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তবে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের অনুপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ায় হতাশ হন তারা। বৈঠকে অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়াছমিন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, “আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। ৮ মাস ধরে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখনো আমাদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। আমরা সচিবালয়ে যাব না, বরং তারা যেন আমাদের কাছে এসে সমাধান করেন।”
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি
১. ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতি বাতিল, বিতর্কিত নিয়োগ ও নিয়োগবিধি বাতিল করতে হবে।
২. ভর্তিতে বয়সসীমা নির্ধারণ, উন্নত কারিকুলাম ও ইংরেজি মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম চালু।
৩. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উপযুক্ত পদে নিয়োগ নিশ্চিত, অবমাননাকরভাবে নিচু পদে নিয়োগ বন্ধ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
৪. কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় কারিগরি পটভূমির জনবল নিয়োগ বাধ্যতামূলক, দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগ।
৫. কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন এবং কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠা।
৬. টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, চলমান প্রকল্পগুলোর ক্যাম্পাসে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত।
নতুন দাবি: ল্যাব এসিস্ট্যান্টদের পদোন্নতি বাতিল
ছয় দফার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা নতুন দাবি হিসেবে যুক্ত করেছে ল্যাব এসিস্ট্যান্টদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত বাতিলের বিষয়টি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কেউ পিয়ন হিসেবে যোগ দিয়ে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বেসরকারি পলিটেকনিকগুলোতে যথাযথ ল্যাব সুবিধার অভাব, অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুষ্ঠু তদারকি ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মিজবাহুল ইসলাম রিফাত বলেন, “আমরা এতদিনে অনেক ধৈর্য ধরেছি। বারবার দাবি জানিয়ে, স্মারকলিপি দিয়ে, কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। এখন আমরা আর সচিবালয়ে যাব না। বরং কর্তৃপক্ষকেই আসতে হবে আমাদের কাছে।”
কারিগরি শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে এখন চোখ সরকারের ওপর—দ্রুত সমাধান না হলে আন্দোলনের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
এসএস