চলতি বছরের মার্চে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির জীববিজ্ঞানী কাট বোলস্টাড অ্যান্টার্কটিক অভিযান শেষ করে ফিরছিলেন। এ অভিযানে তিনি একটি নতুন ধরনের ক্যামেরা সিস্টেম ব্যবহার করেছিলেন। অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল গভীর সমুদ্রে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় কলোসাল স্কুইড খুঁজে বের করা। যদিও সেই অভিযানেও তিনি প্রাণীটিকে নিজের চোখে দেখতে পাননি।
তবে ফিরে আসার দিনই তিনি একটি অবিশ্বাস্য ভিডিওর কথা জানতে পারেন। এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল ২০২৫ সালের ৯ মার্চ, দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জের কাছে। গভীর সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সাবমারসিবল দিয়ে ধারণ করা ভিডিওতে ধরা পড়ে একটি ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা স্কুইড। যেটির দেহ স্বচ্ছ, সূক্ষ্ম বাহু ও বাদামি দাগে পূর্ণ।
এই ভিডিও নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মন্টেরি বে অ্যাকুয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জীববিজ্ঞানী ক্রিস্টিন হাফার্ড। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের অনুসন্ধান আমাদের সমুদ্রের গভীর রহস্য বোঝার সুযোগ দেয়। যেমন, আমি একবার অক্টোপাসকে হাঁটতে দেখেছিলাম, যা পরবর্তীতে রোবোটিকস গবেষণায় কাজে লেগেছে।’
গবেষকরা ভিডিওটি বিশ্লেষণের জন্য বিজ্ঞানী বোলস্টাডের কাছে পাঠালে তিনি নিশ্চিত হন–এটি একটি কলোসাল স্কুইডের ছানা। তার ভাষায়, ‘ভিডিওটি দেখেই আমি বুঝে যাই, এটা সেই কলোসাল স্কুইডই হতে পারে।’
ভিডিওতে দেখা স্কুইডটি ছিল প্রায় ৬০০ মিটার গভীরে। আর প্রাপ্তবয়স্ক স্কুইড থাকে তার চেয়েও গভীরে। অনেক স্কুইড শৈশব কাটায় অপেক্ষাকৃত অগভীর পানিতে, যেখানে তাদের স্বচ্ছ দেহ শিকারিদের চোখ এড়াতে সাহায্য করে। বোলস্টাড মনে করেন, কলোসাল স্কুইডকে তেমন একটা দেখতে পাওয়া যায় না।
কারণ হল তাদের গভীর সমুদ্রের আবাসস্থল। এ ছাড়া তারা হয়তো স্বভাবতই মানুষের উপস্থিতি এড়িয়ে চলে। এ প্রজাতির স্কুইডের প্রধান শত্রু হলো স্পার্ম হোয়েল। আত্মরক্ষার জন্য কলোসাল স্কুইডের রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চোখ। যা বাস্কেটবলের চেয়েও বড় হতে পারে।
এই বিরল প্রজাতির স্কুইডকে প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছিল ১৯২৫ সালে, যখন একটি স্পার্ম হোয়েলের পেট থেকে এর বাহুর অংশ পাওয়া যায়। কলোসাল স্কুইড পূর্ণবয়স্ক হলে দৈর্ঘ্যে হতে পারে ৬ থেকে ৭ মিটার (প্রায় ২৩ ফুট)। এটি পৃথিবীর সব অমেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। এই প্রাণী সাধারণত গভীর সমুদ্রে বাস করে, তাই খুব কমই মানুষের চোখে পড়ে। জেলেরা মাঝে মাঝে হুক লাগানো মাছের টানে স্কুইড পায়, তবে সেটাও বিরল। আর এতদিন এই প্রাণীকে কখনো জীবন্ত অবস্থায় তার প্রাকৃতিক আবাসে দেখা যায়নি।
বোলস্টাড বলেন, ‘আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, কবে আমরা কোনো প্রাপ্তবয়স্ক কলোসাল স্কুইডকে জীবিত অবস্থায় গভীর সমুদ্রে দেখতে পাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই প্রথম দেখার অভিজ্ঞতা যদি কোনো বিশাল দৈত্য নয়। বরং এই স্বচ্ছ, কাচের মতো সৌন্দর্যময় একটি ছোট স্কুইড। হয়তো এই ছোট্ট ছানাটিই একদিন হয়ে উঠবে প্রকৃতির অন্যতম রহস্যময় প্রাণী।’
এসএম/টিএ