বিচার আর সংস্কার হবে, তারপর ইলেকশন : জামায়াতের আমির

জুলাই আন্দোলনে যাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার দেখতে চাই। জুলাই হত্যার বিচার আর প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ দেখতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান

তিনি আরও বলেন, আগে এই দুটো হবে তারপর ইলেকশন হবে। আমরা ইলেকশন চাই তার আগে এই দুটো চাই। এই দুটো ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কোনো ইলেকশন মেনে নেবে না। বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের বড় খুনি হওয়ার আশঙ্কা আছে।


শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে নীলফামারীর জলঢাকা স্টেডিয়াম মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, যদি সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হয়, তাহলে ছয়-নয়ের নির্বাচন জনগণ দেখতে চায় না। ডামি ইলেকশন, নিশি রাতের ইলেকশন আর কুকুর বিড়াল মার্কা ইলেকশন জনগণ দেখতে চায় না। পেশীশক্তির ইলেকশন দেখতে চায় না, কালো টাকার প্রভাবের ইলেকশন দেখতে চায় না। পেশীশক্তি ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত ইলেকশন দেখতে চায়। এজন্য আমরা পরিষ্কার বলেছি ইলেকশনের পদ্ধতি পাল্টাতে হবে। জনগণের প্রত্যেকটা ভোটের মূল্যায়নের জন্য আনুপাতিক হারে নির্বাচনে যেতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের প্রত্যেকটা ভোটের মূল্যায়ন হবে।

তিনি আরও বলেন, আজ থেকে এক বা দুই বছর আগে এমন একটি পরিবেশ বাংলাদেশের মানুষ কল্পনা করেনি। কারণ পুরোটা বাংলাদেশকে একটা জীবন্ত জেলে পরিণত করা হয়েছিল। ফ্যাসিবাদীরা বিদায় নিয়েছে, এই ফ্যাসিবাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার এটিএম আজাহারুল ইসলাম এখনো কেন জেলে এর জবাব সরকারকে দিতে হবে। আমরা কোনো ধানাইপানাই চাই না, তাকে জনগণের বুকে ফিরিয়ে দিন। জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিন।

এই নিরাপরাধ মানুষগুলোকে অপরাধী গায়ের জোরে সাজিয়েছিল যারা, আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণের অন্তর থেকে তাদের গায়েব করে দিয়েছেন। হাজারো মায়ের বুক খালি করেছে, হাজারো বোনকে বিধবা করেছে, হাজারো সন্তানকে এতিম বানিয়েছে। জায়গায় জায়গায় আয়নাঘর তৈরি করে এই যুগের নিকৃষ্ট গোপন বন্দিশালা ওরা তৈরি করেছিল। তাদের পুরো শাসনামলজুড়ে মানুষকে সুশাসন দেয় নাই। সোনার বাংলা বানানোর স্লোগান দিয়ে এই বাংলাকে শ্মশান বাংলায় পরিণত করেছিল।

শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের কণ্ঠ থেকে ভাষা হাইজাক করে নেওয়া হয়েছিল। কথা বলার অধিকার ছিল না। প্রতিবাদ করতেই প্রতিবাদী মানুষের ওপর জুলুমের পাহাড় ভেঙে পড়তো। সাড়ে ১৫ বছরে তারা গুম করেছে, খুন করেছে, তারা ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের মহারাজত্ব কায়েম করেছে। চাঁদাবাজ দিয়ে জায়গায় জায়গায় নাপাক করেছে। সবচাইতে বড় আঘাত দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর। আঘাত দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম তারা জামায়াতকেই বেছে নিয়েছে। আমাদের এক-দুইজন করে ১১জন সম্মানিত দায়িত্বশীল নেতাকে তারা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে। পাঁচজনকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকেসহ ছয়জনকে জেলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

জামায়াতের আমির বলেন, যে তার মাটি ও মানুষকে ভালোবাসে সে কি দেশ ছেড়ে পালায়? যাদের মাটি ও মানুষের প্রতি দ্বায় নেই, ভালোবাসা নেই, বসন্তের কোকিলের মতো কুহু কুহু ডাকে আর যখন অপকর্মের শাস্তির মুখোমুখি হয় তখন দেশ ছেড়ে পালায়। আমাদের নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দফায় দফায় বিচারের নামে অবিচার করে ফাঁসি দিয়েছেন, কেউ তো দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন নাই। আল্লাহ জালিমদেরকে ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না।

জলঢাকা উপজেলা জামায়াতের আমির মোখলেছুর রহমান মাস্টারের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য ও সাবেক নীলফামারী জেলা আমির আব্দুর রশীদ, নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, জেলা নায়েবে আমির ড. খায়রুল আনাম, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি ও নীলফামারী আইনজীবী সমিতির সভাপতি আল ফারুক আব্দুল লতীফ প্রমুখ।

এসএম/এসএন

Share this news on: