বিচার বিভাগকে রাষ্ট্রের অন্য দুই অঙ্গের সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ

‘রাষ্ট্রের তৃতীয় অঙ্গ হিসেবে নয়, বিচার বিভাগকে রাষ্ট্রের অন্য দুই অঙ্গের সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

রবিবার (২০ এপ্রিল) আপিল বিভাগের (প্রধান বিচারপতির এজলাস) নবনিযুক্ত বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুবকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রথা অনুযায়ী, আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ হলে নবনিযুক্ত বিচারপতিকে সংবর্ধনা দিয়ে থাকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সেই ধারাবাহিকতায় রবিবার আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচারককক্ষে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দীন খোকন দুই বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেন। পরে দুই বিচারপতিও বক্তব্য দেন। এরপর কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় আপিল বিভাগের অন্য ছয় বিচারপতি বেঞ্চে ছিলেন।

গত ২৪ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২৫ মার্চ শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের নিয়োগ কার্যকর হয়।

আপিল বিভাগের দুই বিচারপতিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘গত বছরের শেষ দিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে এটি সুপ্রিম কোর্টের স্বায়ত্তশাসিত কাঠামো।

বিচারক নিয়োগের জন্য জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলও একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। এই কাঠামো নির্বাহী ও আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচার বিভাগকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, ‘আমাদের দেশে একসময় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধারণা ছিল যে আইন পেশা নারীদের জন্য উপযুক্ত নয়। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় এই যে বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের নারীরা সেই অচলায়তনকে অতিক্রম করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইন পেশার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন।’

তিনি বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষের আইনের আশ্রয় লাভ ও বিচারপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করাই বিচার বিভাগের মূল দায়িত্ব।

বিচার বিভাগ দেশ ও জনগণের আইনি ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে যাবে।

উচ্চ আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বর্তমানে ১০ জন উল্লেখ করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, ‘এ সংখ্যা অদূর ভবিষ্যতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ সংখ্যা বৃদ্ধি শুধু নারীর ক্ষমতায়নের জন্যই যথেষ্ট নয়, বরং সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা নিশ্চিতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক মামলার বিষয়বস্তু রয়েছে, যেখানে বিশেষভাবে নারীরাই ভিকটিম অথবা বিচারপ্রার্থী হন। এসব ক্ষেত্রে নারী আইনজীবী বা নারী বিচারক বিচারকাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে বিচারপ্রার্থীর জন্য স্বস্তিদায়ক হয় এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে আরো জনমুখী ও জেন্ডার ফ্রেন্ডলি করে তোলে।’

বক্তব্যে শুরুতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগ, বীরত্বকে স্মরণ করেন।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গাজায় আরও ৩০ হাজার তরুণকে যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ Apr 20, 2025
img
ছোট ছেলে আব্রামের পেছনে মাসে কত খরচ শাহরুখের Apr 20, 2025
img
যারা দেশে বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়, তারা কখনোই জনগণের বন্ধু হতে পারে না : মির্জা ফখরুল Apr 20, 2025
img
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ২ জন Apr 20, 2025
img
সংস্কার কাজে দেরি না করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Apr 20, 2025
img
চট্টগ্রামে পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ সিএনজির দুই যাত্রী Apr 20, 2025
img
সুপারহিট তামান্নার‘ওডেলা ২’সিনেমা সুপারফ্লপ Apr 20, 2025
img
অনাথ শিশুকে উদ্ধার, নেটিজেনদের প্রশংসায় ভাসছেন দিশা পাটানির বোন Apr 20, 2025
img
জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন Apr 20, 2025
img
শুনানির জন্য প্রস্তুত এ টি এম আজহারের আপিল, সোমবার উপস্থাপন Apr 20, 2025