বিশ্বে প্রথমবারের মতো হিউম্যানয়েড রোবট হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে চীনের বেইজিংয়ে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) শহরতলি ইয়িজুয়াংয়ে ২১.১ কিলোমিটার দূরত্বের এই দৌড়ে অংশ নেয় ২০টি রোবট, যারা প্রতিযোগিতা করে মানব দৌড়বিদদের সঙ্গে। প্রযুক্তির দৃষ্টিতে এটি ছিল এক নতুন মাইলফলক ও সাহসী অগ্রগতির প্রদর্শন।
প্রতিযোগিতায় ২১ কিলোমিটারের কিছুটা বেশি পথ অতিক্রম করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে থিয়ানকং আল্ট্রা নামের একটি রোবট। যাকে তৈরি করেছে বেইজিং হিউম্যানয়েড রোবট ইনোভেশন সেন্টার। এ পথ দৌড়াতে রোবটটি সময় নিয়েছে ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৪২ সেকেন্ড।
রোবটিক্সে ও প্রযুক্তির পরীক্ষা
গত কয়েক মাস ধরেই চীনা স্টার্ট-আপ কোম্পানিগুলো রোবটিক্স জগতে বৈপ্লবিক সাফল্য অর্জন করে আসছে। তাদের তৈরি রোবটগুলো শুধু হাঁটা নয়, বরং ব্যাকফ্লিপ, তায়কোন্ডো ও টাইকির মতো কৌশলগত নড়াচড়া করতে পারছে অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চীনের রোবট নির্মাণে সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তি আরও একধাপ এগিয়ে গেল, যা দেশটির শিল্প ও প্রযুক্তির ভবিষ্যৎকে আরও দৃঢ় করে।
রোবট বনাম মানুষ
রোবটের পূর্বেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মানুষ প্রতিযোগীরা শেষ করে দৌড়ের মাইলফলক। প্রতিযোগিতার মূল আকর্ষণ ছিল ১.৮ মিটার লম্বা ‘থিয়ানকং আল্ট্রা’ রোবট। যে মাত্র ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে দৌড় শেষ করে রোবটদের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে। যদিও রোবটের গতি এখনো মানুষের মতো নয়, তবে এটি এক বিশাল মাইলফলক।
রোবট বনাম মানুষ, এগিয়ে কারা
তবে মানুষের মতো হোঁচট খেতে হয় রোবটদেরও। দৌড়ের একদম শুরুতেই মানুষের মতো মুখোশ পরা এক রোবট হাঁটু গেড়ে পড়ে যায়। পরে ৭৫ সেন্টিমিটার লম্বা এক রোবট তাকে অতিক্রম করে। এছাড়া ‘জুয়ানইউয়ান’ নামে আবেগ শনাক্তকরণ ক্ষমতাসম্পন্ন রোবটও হোঁচট খায় প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে।
মানুষের মতো হোঁচট খেতে হয় রোবটদেরও
দৌড়ের ১৬ কিলোমিটার পৌঁছানোর পর হঠাৎ করে পড়ে যায় রোবট থিয়ানকং আল্ট্রা। মুহূর্তেই তার সহকারী প্রকৌশলীরা ছুটে আসেন। একবার ভেবেই নেওয়া হয়েছিল রোবট বদল করতে হবে, যা হলে ১০ মিনিট সময় কর্তন করা হতো। তবে ৫ মিনিটের মধ্যেই আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে থিয়ানকং এবং নির্বিঘ্নে চালিয়ে যায় বাকি প্রতিযোগিতা।
প্রদর্শনীতেও ছিল রোবট
মানুষ আর রোবটের মধ্যে প্রতিযোগিতা হলেও আয়োজনের একাংশ জুড়ে ছিল নানান টাইপের রোবটের। যাদের অংশগ্রহণ ছিল নানা ধরণের প্রদর্শনীতে। কেউ ছিল অসাধারণ প্রদর্শনীতে, কেউ করেছিল দৃষ্টিনন্দন কীর্তি। কেউ পরেছিল প্রফেশনাল রানিং সু, কেউ ছিল বৃষ্টির দিনের রেইন বুটস পরা। আকর্ষণীয় নাচ দেখিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে অপর একটি রোবট। অনুষ্ঠানের নানা অংশ জুড়েই ব্যবহার করা হয়েছিল রোবটদের।
অবশেষে ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে থিয়ানকং যখন ফিনিশ লাইন অতিক্রম করে, তখন দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে চিৎকার আর করতালি। যদিও বেশিরভাগ মানব দৌড়বিদ আগেই দৌড় শেষ করেছিলেন, তবু প্রযুক্তি-প্রেমীরা রোবটের পেছনে একত্রে দৌড়ে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হন।
রোবটের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৮ কিলোমিটার। দ্বিতীয় স্থান দখল করে ‘এন২’ নামের একটি রোবট এবং তৃতীয় হয় শাংহাইভিত্তিক কোম্পানি ড্রইড আপ-এর তৈরি একটি রোবট।
ভবিষ্যতের অগ্রযাত্রা
চীনের উদ্ভাবনী শিল্পের কেন্দ্রস্থল বেইজিং ই-টাউনের পথে এই হাফ ম্যারাথনটি আয়োজিত হয়। এই প্রতিযোগিতা রোবটিক্সকে বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করার এক পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছিল।
বেইজিং ইকোনমিক-টেকনোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এরিয়া (বিডিএ) এর এক কর্মকর্তা লিয়াং লিয়াং বলেন, মানব আকৃতির রোবট বানাতে হাজারো যন্ত্রাংশের দরকার হয়, এবং চীনের বৈচিত্র্যপূর্ণ উৎপাদনশীলতা সেই ভিত্তি প্রদান করছে। তিনি বলেন, প্রতিটি ট্র্যাকের শেষ আছে, কিন্তু মানব-রোবট সহযাত্রার কোনো শেষ নেই।
থিয়ানকং রোবট এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেইজিং হিউম্যানয়েড রোবট ইনোভেশন সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার সিয়ং ইউজুন বলেন, বিজয়ী হওয়া নয়, প্রতিযোগিতা শেষ করতে পারাই হচ্ছে বড় জয়। এই দৌড় এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটাই রোবট-মানব সহাবস্থানের প্রথম পদক্ষেপ।
জানা যায়, আগস্ট মাসে বেইজিংয়ে আয়োজন করা হবে হিউম্যানয়েড রোবট গেমস, যা হবে এ প্রযুক্তির আরও বিস্তৃত মঞ্চ।
আরএ