পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমিরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা নানা নাটকীয়তায় মোড়ানো। অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরুর পর ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো অভিশপ্ত ঘটনা সব ওলট-পালট করে দেয়। সেখান থেকে ক্রিকেটে ফেরার পর আচমকা অবসর, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ফের জাতীয় দলে ফেরা এবং এরপর আবারও অবসর নেন এই তারকা। তার দ্বিতীয়বার অবসরের ঘোষণাও সবাইকে চমকে দিয়েছিল। যার ব্যাখ্যা দিলেন আমির।
বর্তমানে চলমান পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে খেলছেন এই পাক পেসার। তারই এক ফাঁকে নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন স্থানীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে। আমির জানান, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে দেখি কেউই আমার সঙ্গে কথা বলছে না। কেউ বলেনি আমি তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আছি কি না। যেকোনো বুঝদার ব্যক্তি এসব সংকেত বোঝার কথা। যদি তুমি কারও পরিকল্পনায় না থাকো, তবে নিজেই নিজের চিন্তা করো।’
সেই ক্ষোভ থেকেই মূলত দ্বিতীয়বার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন ৩৩ বছর বয়সী এই বাঁ-হাতি পেসার। অথচ জাতীয় দলের জন্য ইংল্যান্ডের বড় অর্থের চুক্তি বাতিল করে ফিরেছিলেন আমির, ‘যা করা দরকার ছিল তাই করেছি। আমি মনস্থির করে নিই– অনেক ধন্যবাদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। কাউন্টির (ইংলিশ ঘরোয়া প্রতিযোগিতা) চুক্তি ছেড়ে দিয়ে আমি বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলাম। সত্যি বলতে এখানে আমার যা আয় হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ ছেড়ে এসেছি। আমি প্রশিক্ষকসহ বিমানে চেপেছিলাম, ফলে পুরো ব্যয়ভারই নিজের পকেট থেকে গেছে। কিন্তু এটি এখন ভিন্ন ঘটনা।’
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও তারকা ব্যাটার বাবর আজমের ফর্মহীনতা নিয়েও কথা বলেছেন আমির। তার সামর্থ্যের প্রশংসা করার পাশাপাশি কৌশলগত ত্রুটি চিহ্নিত করে বলেন, ‘বাবর এখনও পাকিস্তানের সেরা ক্রিকেটার। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু সে এখন জটিল পরিস্থিতিতে আছে এবং এজন্য অনেকদিন ধরেই ভুগতে হচ্ছে তাকে। আমি খেয়াল করলাম সে বল খেলতে কিছুটা দেরিতে ব্যাট চালাচ্ছে, যা তার শট নির্বাচনেও প্রভাব ফেলছে।’
কয়েকদিন আগে বাবরের পেশোয়ার জালমির মুখোমুখি হয়েছিল আমিরের কোয়েটা। সেই ম্যাচে বাবরকে আউট করে বুনো উল্লাসে মাতেন এই তারকা পেসার। মাঠে এমন আগ্রাসী মেজাজে থাকা প্রসঙ্গে আমির বলেন, ‘খেলার মাঠে কোনো বন্ধু কিংবা সিনিয়র-জুনিয়র নেই, যদি কোনো ব্যাটার আমার প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারে, আমি তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরব না। অবশ্যই আমি তার মনোযোগটা নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টায় থাকব। এটা খেলারই অংশ। একইসঙ্গে আমি যদি কোনো মন্তব্য বা আচরণে সীমা ছাড়িয়ে যাই, তখন আম্পায়ার আমাকে জরিমানা করবে। তারা আমাকে শাস্তি দেয়নি মানে আমি সীমার মধ্যে আছি।’
আক্রমণাত্মক থাকাও খেলারই অংশ বলে মনে করেন পাকিস্তানের হয়ে ১৫৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এই তারকা। সবমিলিয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে তিনি ২৭১টি উইকেট শিকার করেছেন। আমির বলছেন, ‘ক্রিকেট এখন আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গে অভ্যস্ত। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসকেও (ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ও বর্তমানে কোয়েটার কোচ) জিজ্ঞেস করে দেখুন।
মনে হতে পারে রাগে অনেক সময় ব্যাট ছুড়ে মারবেন। মানসিকভাবে আগ্রাসী হওয়া খেলার বাড়তি সৌন্দর্য্য তৈরি করে। তার মানে এই না যে আপনি (প্রতিপক্ষকে) অসম্মান করছেন, এই মনোভাব দেখিয়ে ব্যাটারের ফোকাসটা সরিয়ে দেওয়া যায়। মাঠের বাইরে আবার আমরা এক হয়ে যাই, আলোচনা ও মজা করি।’
এমআর/টিএ