নতুন সরকারের আগমনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পেয়েছিল নতুন নেতৃত্ব। ফারুক আহমেদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব। ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন নেতৃত্বে ক্রিকেট ফিরবে সাফল্যের ধারায়। তবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ফারুক আহমেদের ৯ মাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির বদলে উল্টো ঘাটতির ছাপ স্পষ্ট। মিডিয়ার সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজের ফিরিস্তি দিলেও বাস্তবতা বলছে, মাঠের ক্রিকেট থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় বিসিবি এখন নানা অনিয়মের চাপে।
জানা যায়, ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফারুক সর্বপ্রথম নজর দেন বিসিবির ১৩০০ কোটির এফডিআরে। স্ট্যান্ডিং কমিটি বণ্টনে কালক্ষেপণ করে নিজের নির্বাহী ক্ষমতা বলে প্রবলেম ব্যাংকে এফডিআর ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করেন তিনি। অনুসন্ধানে প্রবলেমে থাকা দুই ব্যাংকে অবিশ্বাস্য লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। দুটি ব্যাংকের আদি অক্ষর ইংরেজি ‘এম’ দিয়ে। আগস্টে দায়িত্ব নিয়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এই দুই মাসে বিসিবি সভাপতি একটি ব্যাংকে ট্রান্সফার করেন ৫২ কোটি টাকা। শুধু সেপ্টেম্বরেই ৩৩ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা হয় এম আদ্যাক্ষরের আলোচিত আরেকটি ব্যাংকে। যার ২৫ কোটি আবার আসে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে। একই প্রবলেম ব্যাংক পরের মাস অর্থাৎ অক্টোবরে পায় আরও ১৯ কোটি টাকার এফডিআর। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঐ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতা এরকম অস্বাভাবিক লেনদেনে বড় ভূমিকা রাখে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ট্রান্সফারের আগে আলোচিত ঐ ব্যাংকে বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট ছিল মাত্র ৩ কোটি টাকার।
গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, ‘এম’ আদ্যাক্ষরের অপর প্রবলেম ব্যাংকে বর্তমান সভাপতি টাকা ঢুকিয়েছেন আরও বেশি। ঐ ব্যাংকের মালিকানায় আছেন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরা। এই ব্যাংকে ফারুক ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন গেল বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর এই চার মাসে। ক্রিকেট বোর্ডের ফান্ড থেকে তিন দফায় এফডিআর করা হয় ১০ কোটি ১৪ কোটি এবং ৩০ কোটি টাকা। এই ৫৪ কোটি টাকার বাইরে বিসিবির বিপিএল অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ১২ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট পায় আলোচিত ‘এম’ আদ্যাক্ষরের ইয়েলো জোনো থাকা দ্বিতীয় ব্যাংক। যে ব্যাংকে ক্রিকেট বোর্ডের মোট ডিপোজিট ১০০ কোটি টাকার বেশি। প্রবলেম ব্যাংক প্রীতির ব্যাপারে বিসিবি থেকে যেন কোনো ন্যূনতম তথ্য বের না হয় তা নিশ্চিতে বোর্ড সভাপতির রুমে ডেকে কর্মকর্তাদের শাসানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে।
জানা যায় শুধু ব্যাংকে টাকা রাখা নয়, বিসিবি সভাপতি পছন্দের মানুষকে বিপিএলে দলে দেওয়ার ব্যাপারেও ছিলেন মুক্তমনা। আলোচিত সমালোচিত রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি শফিকুর রহমানকে দল দেওয়া হয় প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্তে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল গঠনের আগেই দলবণ্টন সেরে ফেলা হয়। ফরচুন বরিশাল ছাড়া কোনো দল থেকে ব্যাংক গ্যারান্টির টাকাও তুলতে পারেনি বিসিবি। বিসিবি এখন পর্যন্ত বিপিএলে খেলা ক্রিকেটারদের শতভাগ পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে পারেনি। রাজশাহীর ক্রিকেটাররাই এখনো ২৫ পার্সেন্ট পারিশ্রমিক পাননি। সাপোর্ট স্টাফদের অবস্থা আরও খারাপ। ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার চুক্তির টাকা না পেয়ে ম্যাচ বর্জন করেন বিদেশি ক্রিকেটাররা। বাস ড্রাইভার দ্বারা ক্রিকেটারদের কিট ব্যাগ আটকে রাখার ঘটনাও ঘটেছে সর্বশেষ বিপিএলে। উল্লেখ্য, বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ নিজেই।
এদিকে ব্রডকাস্ট রাইটস বা সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রির বিষয়েও বিসিবি এখন ধুঁকছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা বোর্ড সভাপতি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক প্রদানে চূড়ান্ত ব্যর্থ, মার্কেটিং কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিও নিজ হাতে রেখেছেন। জানা যায়, ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম আয়ের উত্স ব্রডকাস্ট রাইটস। চলমান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজের রাইটস কেনেনি কোনো কনসোর্টিয়াম। ফলে বিটিভি যুগে ফিরে গেছে বিসিবি।
প্রসঙ্গত বিসিবির মার্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান খোদ বোর্ড সভাপতি। গণমাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে জানা গেছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করলেও, এখনো অন্তত একটা মিটিংও করতে পারেননি তিনি। নানা ডমেস্টিক টুর্নামেন্টে বিসিবি ক্রিকেটিং প্রোডাক্ট বিক্রিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ, ঘরোয়া লিগ আর বয়সভিত্তিক দলের টাইটেল স্পন্সরশিপ ম্যানেজ করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট দিয়ে।
সর্বশেষ আইসিসি সভায়ও যোগ দিতে জিম্বাবুয়ে যান ফারুক আহমেদ। তবে যাওয়া-আসার পথে ব্যক্তিগত কাজে অবস্থান করেন আরব আমিরাতের দুবাইয়ে, যার খরচও যথারীতি বহন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
এসএম/টিএ