প্রয়োজনীয় সংস্কারে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস

বিশ্ব অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি ধীরে ধীরে বাড়তে পারে।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস এবং বিনিয়োগের অভাবের কারণে অর্থবছর ২০২৪ এ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশ থেকে কমে ৪.২ শতাংশে নেমে এসেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে এবং অর্থবছর ২০২৫ এ প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৩.৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বিনিয়োগের মন্থরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এখনও চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হচ্ছে, অর্থবছর ২০২৫ এ রেমিট্যান্স প্রবাহে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাহ্যিক খাতের চাপ কিছুটা কমেছে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ঋণ ও উপকরণের বর্ধিত ব্যয়ের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা যেতে পারে। একইসঙ্গে সরকার কর্তৃক মূলধন ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত সরকারি বিনিয়োগকেও সীমিত করবে। মধ্যমেয়াদে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকার সম্ভাবনা থাকলেও, মূল্যস্ফীতি নিকট ভবিষ্যতে একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার মনে করেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার করতে এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রয়োজন। বাণিজ্য উন্মুক্ত করা, কৃষি খাতকে আধুনিকীকরণ করা এবং বেসরকারি খাতের গতিশীলতা বাড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়।

বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বাংলাদেশ গেইল মার্টিন আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে, বাণিজ্য সহজ করতে এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়াতে ‘সাহসী ও জরুরি সংস্কার’ এর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তবে আশার কথা এই যে, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, তবে মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি ধীরে ধীরে বাড়তে পারে। কঠোর মুদ্রানীতি, রাজস্ব একত্রীকরণ এবং খাদ্য পণ্যের আমদানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অন্যদিকে, বাণিজ্য সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা এবং প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোতে দুর্বল চাহিদা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা বলেছেন, বাণিজ্য সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা, ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির চাপ, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজারে দুর্বল চাহিদা এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা বৃদ্ধির কারণে প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে।

উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ এর একটি অংশ। আঞ্চলিক এই প্রতিবেদনে ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ একত্রীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যেখানে প্রায়শই উচ্চ করের হার থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চলের কর রাজস্ব অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় কম। রাজস্ব বৃদ্ধি করে কীভাবে একটি কঠিন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা আনা যায়, সে বিষয়েও প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হয়েছে।

আরআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পারভেজ হত্যায় ২ ছাত্রীর আটকের খবর, যা জানাল ডিএমপি Apr 25, 2025
img
পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের জন্য সতর্কবার্তা Apr 25, 2025
img
প্রবাসীদের সহযোগিতায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে : ড. ইউনূস Apr 25, 2025
img
হামলা চালাতে পারে ভারত, আশঙ্কা নিয়েই ‘প্রস্তুত’ পাকিস্তান Apr 25, 2025
ইউনুস আ. যেভাবে মাছের পেটে ছিলেন | ইসলামিক জ্ঞান Apr 25, 2025
img
ছবির প্রিমিয়ার বর্জনের ঘোষণা স্বস্তিকার, ভক্ত ও ব্যবস্থাপনায় বিরক্তি Apr 25, 2025
পাকিস্তানের সাথে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নয়, সাফ জানালো ভারত Apr 25, 2025
কাশ্মীর ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করলেন কানেরিয়া Apr 25, 2025
img
সাতক্ষীরায় ধ্বংস করা হলো কার্বাইড মিশ্রিত ৯০০ কেজি আম Apr 25, 2025
img
পিএসএলে ‘চাকিং’য়ের অভিযোগের মাঝে রিজওয়ান-মুনরোকে শাস্তি Apr 25, 2025