বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক জান শরীফ মিঠুর লাশ ৯ মাস পর কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে মিঠুর লাশ পুনরায় দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার ঢাকার সিএমএম আদালতের নির্দেশে ফরিদপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে রাব্বির উপস্থিতিতে শহরের গোয়ালচামটে জান শরীফ মিঠুর বাসভবনের সামনে পারিবারিক কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়।এ সময় ঢাকার রামপুরা থানা থেকে আসা পুলিশের একটি বিশেষ টিমসহ কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক জান শরীফ মিঠু পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরায় থাকতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই দুপুরে ঢাকার বনশ্রী জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে ৪-৫ জন সঙ্গীর সঙ্গে বাসায় ফেরার পথে শরীরে গুলিবিদ্ধ হলে দ্রুত তাকে বনশ্রী ক্লিনিকে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন নিহতের লাশ অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতাল থেকে ফরিদপুরে নিয়ে আসা হয়। এরপর ওই রাতেই তাকে বাড়ির সামনে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় গত বছরের ৯ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন মিঠুর স্ত্রী রোহেদুন সেজবা ইভা। ওই মামলায় কিছুদিন আগে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তবে সে সময় মিঠুর পরিবার কবর থেকে লাশ উত্তোলনে রাজি না হওয়ায় ময়নাতদন্তের এ কাজ বিলম্বিত হয়। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে পুনরায় লাশ নিহতের বাড়ির সামনে দাফন করা হয়।
নিহত মিঠুর স্ত্রী রোহেদুন সেজবা ইভা বলেন, ‘স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে আবার কাটাছেঁড়া করা হবে, এটি মেনে নেওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল। কিন্তু স্বামী হত্যার বিচার পেতে হলে এ ছাড়া কোনো ভিন্ন উপায় ছিল না। তাই সবার অনুরোধে আমরা রাজি হই। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পরে বলা হয় শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করবেন বলে তারা জানান। এ অবস্থায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সহায়তায় বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে আবারও স্বামীর লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরে তাকে পুনরায় দাফন করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর জেলার সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘দুপুরে আমরা খবর পাই কবর থেকে শহীদ মিঠুর লাশ উত্তোলনের পর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখার পর শনিবারের আগে লাশের ময়নাতদন্ত সম্ভব নয়। এ খবর পেয়ে আমরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাই এবং কর্তৃপক্ষকে বলে বাইরের একটি হাসপাতাল থেকে পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন সংগ্রহ করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।’
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. ইউনুস আলী জানান, এই লাশের ময়নাতদন্ত অন্য সব লাশের ময়নাতদন্তের মতো নয়। এটির জন্য পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন দরকার যা আমাদের হাসপাতালে ছিল না।
পরে এ নিয়ে একটু ঝামেলা হলে প্রিন্সিপাল স্যারের উপস্থিতিতে ঝামেলার নিরসন করা হয়। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে নওগাঁর মেয়ে রোহেদুন সেজবা ইভার সঙ্গে বিয়ে হয় মিঠুর। মাহাবী শরীফ জারা নামে তাদের কন্যা সন্তান রয়েছে। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের মোল্লা বাড়ির বাসিন্দা শরীফ সামসুল আলম মন্টুর পুত্র জান শরীফ মিঠু (৪৬)।
এমআর/টিএ