মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কাউন্সিলে বিশৃঙ্খলা ও হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছে। যুবলীগ নেতা হৃদয় আহমদ সদরকে ওয়ার্ড কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার পরই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলটি স্থগিত করা হয়।
এদিকে হট্টগোলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে সর্ব মহলে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনার ঝড়।
জানা গেছে, গত ১৮ এপ্রিল ভাটেরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ভাটেরা ইউনিয়ন বিএনপির সমন্বয়ক আব্দুল মুক্তাদির মুক্তার।
কাউন্সিল অধিবেশনের এক পর্যায়ে কমিটিতে হৃদয় আহমদ সদরকে ৩৬ নম্বর সদস্য হিসেবে প্রস্তাব করেন তার চাচা ও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রনি হাসান সালাম। এ সময় ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সভাপতি আবুল কালাম তছনসহ উপস্থিত নেতাকর্মীরা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানান। এ সময় উপস্থিত বাকবিতণ্ডা শুরু হলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আবুল কালাম তছন তার বক্তব্যে বলেন, দলীয় উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি বা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে বিএনপির কমিটিতে রাখা যাবে না। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক রনি হাসান সালাম প্রকাশ্যে সদরের পক্ষ নিয়ে আবুল কালাম তছনের সঙ্গে তর্কে জড়ান।
ভাটেরা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আবুল কালাম তছন কালবেলাকে বলেন, আমি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। হৃদয় আহমদ সদর একজন চিহ্নিত যুবলীগ নেতা।
যিনি বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাই দলের সিদ্ধান্তনুযায়ী তার নাম কমিটিতে রাখার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তার ভাতিজা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রনি হাসান সালাম জোর করে তাকে কমিটিতে ঢোকাতে চান। এতে আমিসহ অন্য নেতাকর্মীরা বাধা দেওয়ায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন সালাম। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও হট্টগোল দেখা দিলে কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা বিএনপিকে অবগত করা হয়েছে।
ভাটেরা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ রনি হাসান সালাম বলেন, ভাটেরা ইউনিয়নে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলে হৃদয় আহমদ সদরকে ৩৬ নম্বর সদস্য প্রস্তাব করা হলে আপত্তি করেন ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আবুল কালাম। অথচ আহ্বায়ক কালামসহ কমিটির অনেকেই অতীতে নৌকা-পাটের পক্ষে কাজ করেছেন। বিগত ১৬ বছর বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় স্থানীয়ভাবে বিএনপির অনেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল।
তিনি আরও বলেন, সদর একসময় যুবদলের রাজনীতি করতেন। দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের পদ-পদবিতে থাকা কাউকে কমিটিতে স্থান না দিতে। হৃদয় আহমদ সদর কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির পদ-পদবিতে ছিলেন না। তাই তার নাম কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ভাটেরা ইউনিয়ন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক আব্দুল মুক্তাদির মুক্তার বলেন, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের দোসররা পুলিশ দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করেছে। তাই কমিটি গঠনে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিল অধিবেশনে কমিটির শীর্ষ পদের নাম চূড়ান্ত হলেও সদস্য পদে সদরের নাম কিছু নেতাকর্মী প্রস্তাব করলে আপত্তি করেন ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আবুল কালাম। তখন আহ্বায়ক আবুল কালাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক রনি হাসান সালামের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তাদের দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। এজন্য পরিস্থিতি শান্ত করতে তাৎক্ষণিক কাউন্সিল স্থগিত করি। পরবর্তীতে দলের সিনিয়র দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরএ/টিএ