ছেলেবেলা থেকেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ছিলো ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার খেজুর তলা গ্রামের ইলেকট্রিশিয়ান মারুফ হোসেনের (২১)। বড় ঘুড়ি থেকে শুরু করে বেলুন, আকাশে উড়ার চেষ্টায় বাদ যায় নি কিছুই। তবে ব্যার্থ হতে হয়েছে প্রতিবার। একসময় ফেসবুক- ইউটিউব থেকে জানতে পারেন প্যারাগ্লাইডারের মাধ্যমে আকাশে উড়ার কথা। সেখান থেকেই শুরু। ইউটিউব দেখে দেখে আর স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে বানিয়ে ফেলেন প্যারাগ্লাইডার। যা দিয়ে প্রায় আড়াই মাসে ১০০ বারের বেশি তিনি আকাশে উড়েছেন।
২০২২ সালে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে পড়ালেখা আর এগোয়নি মারুফের। শুরু করেন ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ। স্বপ্ন ছিল নিজের বানানো মোটর পিঠে লাগিয়ে প্যারাগ্লাইডারের মাধ্যমে আকাশে উড়ার। সে স্বপ্নে তিনি সফল হয়েছেন।
মারুফ হোসেন সদরপুরের চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের মাজহার মোল্লার ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট।
খেজুরতলা গ্রামের বাসিন্দা সাজ্জাদুর রহমান (৩৮) বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। তবে সম্প্রতি বাড়িতে গিয়ে মারুফকে প্যারাগ্লাইডিং করতে দেখেছি। বিষয়টি যদিও আলাদা আলাদা পণ্য বাজার থেকে কিনে কিনে সেটিং করেছে তবুও এটি প্রশংসা করার মতো। কারণ এটি সফলভাবে একজন মানুষকে নিয়ে আকাশে উড়তে পেরেছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যন্ত্রটিকে যদি সুন্দরভাবে সফলভাবে বাজারে আনার উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার নেয়, তাহলে কম টাকায় অনেক ভালো জিনিস ক্রেতারা পাবেন। পাশাপাশি দেশ ও মারুফ নিজে আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন।
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা ইমরান (২৯) মিয়া বলেন, আমরা প্রথম প্রথম ওর ওই কাজ দেখে ভেবেছি সফল হবে না। তবে প্রথম যেদিন ও আকাশে উড়েছে। সেদিন আমরা অবাক হয়েছি। এ নিয়ে গ্রামের লোকজন গর্ববোধ করছে।
মারুফ হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই আকাশে উড়ার স্বপ্ন আমার ছিল। কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ছিল না। একটা সময় জানতে পারলাম কক্সবাজারে প্যারাগ্লাইডিং করতে পাঁচ মিনিটের জন্য দুই তিন হাজার টাকা লাগে। এ থেকে ইউটিউব দেখে দেখে গত এক বছরের চেষ্টায় আমি এটি বানিয়েছি।
তিনি জানান, এটি তৈরিতে মূলত রক সুতা, ছাতার কাপড় ও মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এতে তার খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এসব প্যারাগ্লাইডার কিনতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাগে বলে জানান তিনি।
মারুফ বলেন, আমার এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যদি বাজারজাত করা সম্ভব হয় তাহলে এটি আমি এক লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবো।
মারুফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এটি যেহেতু পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে তাই তিনি এতে অন্য কাউকে রাইডিং করতে দেননি। ঝুঁকি বিবেচনা নিয়েই এটি করা হয়েছে। খোলা মাঠ ও নদীর পাড়ে তিনি গত আড়াই মাসে ১০০ বারের বেশি উড়েছেন। প্রতিবার উড়তে এতে খুবই সামান্য টাকা খরচ হয়।
চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি প্রথমে মিডিয়ার মাধ্যমে মারুফের আবিষ্কার সম্পর্কে জেনেছি। মোবাইল দেখে দেখে যে ভালো জিনিস আবিষ্কার করা যায় বা ভালো কিছু করা যায় তার কাছ থেকে তরুণ প্রজন্ম শিখতে পারে।
তিনি বলেন, আমি তার খোঁজখবর নেব এবং সরকারিভাবে তাকে যেন তার এই আবিষ্কারের ধারা ধরে রাখতে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, মারুফ নিজের চেষ্টায় যেটি বানিয়েছে সেটি সত্যিই প্রশংসা করার মতো। আমি তার এই প্যারাগ্লাইডার সম্পর্কে জেনেছি। এটি দেখে আমার মনে হয়েছে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম তার থেকে শিখতে পারে এবং চেষ্টা করলে যে সফল হওয়া যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ মারুফ।
তিনি বলেন, মারুফ যদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ট্রেনিং পায় সে অনেক দূরে যেতে পারে বলে আমার ধারণা।
জাকিয়া সুলতানা বলেন, মারুফ সম্পর্কে খুব দ্রুত আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানাবো।
এফপি/টিএ