আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসের সান ইসিদরো আদালতে বিচার চলছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলোয় তার চিকিৎসায় নিয়োজিত সাতজন চিকিৎসক এই মামলায় অভিযুক্ত। ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) শুনানিতে দুজন চিকিৎসক নিজেদের সাক্ষ্যে বলেছেন, জীবনের শেষদিনগুলোতে রোগী ম্যারাডোনাকে সামলানো কঠিন ছিল চিকিৎকদের জন্য। রোগী হিসাবে আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি ছিলেন চরম অসহযোগী ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।
মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর বুয়েনস এইরেসে এক অভিজাত এলাকায় ভাড়া করা বাড়িতে‘হোম হসপিটাল’ বানিয়ে ম্যারাডোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানেই ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর মৃত্যু হয় সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবল কিংবদন্তির।
ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলোয় মোট আটজন তার চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন। যার মধ্যে অবহেলার অভিযোগে বিচার চলছে সাতজনের বিরুদ্ধে। দিনের বেলায় ম্যারাডোনাকে দেখভাল করতেন যে নার্স, তার বিচার করা হবে আলাদাভাবে।
অবহেলার অভিযোগে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন একজন নিউরোসার্জন, একজন মনোরোগবিদ, একজন মনোবিজ্ঞানী, একজন মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর, একজন নার্স কো-অর্ডিনেটর, একজন চিকিৎসক এবং রাতের পালার নার্স।
যেখানে ম্যারাডোনার অস্ত্রোপচার হয়েছিল, সেই ক্লিনিকের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান সেবাস্তিয়ান ন্যানি আদালতকে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন কোকেনে আসক্ত হওয়ায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগী ছিলেন দিয়েগো। অতিরিক্ত সেবার প্রয়োজনীয়তা ছিল তার। কিন্তু তিনি কোনো নিয়ম মানতে চাইতেন না।
ব্যক্তিগত চিকিৎসক লুক হাসপাতালের বাইরে রেখে দিয়েগোকে পরিচর্যা করার কথা বলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর সঙ্গে একমত ছিল না।’
রোগী ম্যারাডোনার অসহযোগিতার আরও কিছু চিত্র তুলে ধরেন আরেক চিকিৎসক নিউরোসার্জন রোদোলফো বেনভেনুতি, ‘রোগী ম্যারাডোনাকে সামলানো খুবই কঠিন ছিল। চিকিৎসকদের তিনি সহযোগিতা করতেন না। অস্ত্রোপচারের আগে সিটি স্ক্যানের জন্য তাকে রাজি করাতেও বেগ পেতে হতো। অস্ত্রোপচারের পর ক্লিনিক ছেড়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি। সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কারও কথা শোনেনি তিনি। অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিদিন একজন চিকিৎসকের তার বাড়িতে যাওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু ম্যারাডোনার একগুঁয়েমির কারণে তা সপ্তাহে একদিনে এসে দাঁড়ায়।’
এর আগে আর্জেন্টিনার টিভি চ্যানেল এলত্রেসে প্রচারিত অনুষ্ঠান ‘লা নোচে দে মিরথা’য় আইনজীবী বার্লান্দো দাবি করেন যে, ম্যারাডোনার চিকিৎসার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত ছিলেন, তারা কিছু একটা করতে পারতেন। বিচারকাজে কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, ম্যারাডোনাকে যে বাসায় নেওয়া হয়েছিল, সেখানে চিকিৎসার সরঞ্জামের অভাব ছিল।
ম্যারাডোনার মরদেহের ময়নাতদন্তেও অংশ নেন মারিও আলেহান্দ্রো। আদালতে তিনি বলেছেন, ‘সব প্রমাণ বলছে, পরিবর্তনযোগ্য চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।’ সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ফুটবলারের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তীব্র পালমোনারি এডেমা (ফুসফুসে পানি জমা) ও হার্ট ফেইল মৃত্যুর কারণ।’
অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিদের ৮ থেকে ২৫ বছরের জেল হতে পারে। মামলায় প্রায় ১২০ জনের সাক্ষ্যদানের কথা রয়েছে, যা চলতে পারে আগামী জুলাই পর্যন্ত।
আরএম/এনএস