টাঙ্গাইলে দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা শুরু হয়েছে। জেলার সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তিন দিনব্যাপী এই জামাই মেলা শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে চলবে রবিবার পর্যন্ত।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন দোকানীরা। মেলায় বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনী, কাঠের ফার্নিচার, খাবারের দোকান, মিষ্টির দোকানসহ ছোট–বড় দোকান বসেছে। বৈশাখের ভ্যাপসা গরমের মাঝেও মেলায় জামাই ও বউ ছাড়াও হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। কেউ ঘুরছেন আবার কেউ বিভিন্ন পণ্য কিনছেন। মেলায় আসতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) রসুলপুরে মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের অন্তত ৩০ গ্রামের জামাইয়েরা শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। আর মেলায় জমায়েত হন ৩০ গ্রামের জামাইয়েরা।
এ ছাড়া মেলার দিন শাশুড়িরা মেয়ের জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে জামাই বা_জার করে শ্বশুরবাড়ির লোকদের খাওয়ান। এ কারণে মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। তিন দিনে রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে।
সুকুমার সাহা ও প্রদীপ সাহা নামের একাধিক জামাই বলেন, প্রতিবছরই আমরা শ্বশুরবাড়ি থেকে মেলায় আসার দাওয়াত পাই। এই মেলা আমাদের কাছে খুব আকর্ষণীয়। মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আত্মীয়র সঙ্গে দেখা হয়, তাদের সঙ্গে ভাব বিনিময় হয়। সব মিলিয়ে আমরা মেলার দিন আনন্দে মেতে উঠি।
পার্শ্ববর্তী বড় বাসালিয়া গ্রামের আকড়ি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, এমনি আমি রডমিস্ত্রির কাজ করি। মেলা আসলে একটু বাড়তি লাভের আশায় কয়েক বছর যাবত আকড়ি বিক্রি করি। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। অন্যান্য মেলার চেয়ে এ মেলা অনেক নিরাপদ।
মিলন মাহমুদ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, মেলাটি জামাই মেলা নামে পরিচিত। মেলাটিকে কেন্দ্র করে এই এলাকার জামাইরা একত্রিত হয়। এমন মেলায় আসতে পেয়ে খুবই আনন্দিত।
মেলায় ঘুরতে আসা করিম মিয়া বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখনও দাদার কাছে এই মেলার কথা শুনেছি। বাড়ির মেয়ের জামাইরা মেলাকে কেন্দ্র করে বাড়ি আসায় ও মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মেলাটি প্রতিবছর জমে উঠেছে। এটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী বড় মেলা।
রসুলপুরের বাসিন্দা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রহমান বলেন, ‘প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এলাকার মানুষের কাছে ঈদ বা পূজা–পার্বণের মতোই এই মেলা একটি উৎসব। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে শুরু হলেও এখন এটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিত।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান বাসস কে বলেন, ‘মেলা সফল করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দোকানিরা। তারা খাবারের দোকান, মিষ্টিজাতীয় পণ্যের দোকানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনীর দোকানও দিয়েছেন মেলায়।
এ ছাড়াও মেলায় একাধিক ফার্নিচারের দোকানও বসেছে। রসুলপুরের এই মেলাটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম। রবিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এ মেলা শেষ হবে। তিন দিনে মেলায় দুই কোটি টাকার উপরে বাণিজ্য হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এমআর/এসএন