চট্টগ্রামের মাঠের পূর্ব পাশে তখন জিম্বাবুয়ের অনুশীলন প্রায় শেষের দিকে। হঠাৎ পশ্চিম পাশের নেটে ব্যস্ততা বাড়ে। মাঠকর্মীরা উইকেটের ওপরের কাভার সরিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর, ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে আসেন মুশফিকুর রহিম। তার সঙ্গে ছিল তার ব্যক্তিগত সহকারী, যিনি কিট-ব্যাগ নিয়ে আসেন। তবে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরু হতে তখনও দুই ঘণ্টা বাকি ছিল।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লা. লে. মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার দুপুর ২টার কিছুক্ষণ আগে অনুশীলন শুরু করে বাংলাদেশ। তবে বেলা ১২টা বাজতেই মাঠে চলে আসেন মুশফিক। নেট বোলারদের নিয়ে ঘণ্টাখানেক ব্যাটিং করেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
এরপর দলীয় অনুশীলনেও শুরু থেকেই দেখা যায় মুশফিকের উপস্থিতি। নতুন কিছু অবশ্য নয়। যে কোনো ম্যাচের আগে বা অন্য সময়ের প্রস্তুতিতে তার জন্য এটি নিয়মিত চিত্র। গত এক যুগের বেশি সময় ধরেই দলের যে কারও চেয়ে বেশি সময় অনুশীলনে কাটান মুশফিক।
তবে এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। ক্যারিয়ারের গোধূলিতে এসে সবচেয়ে দুঃসময়ের থাবায় জেরবার ৩৯ ছুঁইছুঁই এই ব্যাটসম্যান। সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসেই ৪ রানে আউট হন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর আগের ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি করেন মাত্র ২ রান।
সব মিলিয়ে সবশেষ ১২ ইনিংসে নেই কোনো ফিফটি। এই সময়ে ৪০ রানও ছুঁতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। প্রায় দুই দশক ও ৯৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এত বাজে সময় কখনও কাটেনি মুশফিকের।
২০১৪-১৫ সালে একবার টানা ১১ ইনিংসে ফিফটি করতে পারেননি তিনি। আর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ২০০৮ সালে টানা ১০ ইনিংসে কোনো ফিফটি ছিল না তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের।
সামনে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একশ টেস্ট খেলার হাতছানি, এই সময়ে মুশফিকের ফর্মহীন অবস্থা দলের জন্যও বড় চিন্তার কারণ। যদিও সিলেট টেস্টের পর নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছেন, অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ওপর আস্থা রাখছেন তারা। যে কোনো সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় দল।
রানে ফেরার সেই তাড়না হয়তো তীব্রভাবে অনুভব করছেন মুশফিকও। সেই অভিযানে তাই প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখছেন না তিনি। চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর দুই দিন আগে অনুশীলনে বাড়তি সময় কাটানো যেন এরই বড় উদাহরণ।
দল থেকেও পূর্ণ সমর্থনই পাচ্ছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। শনিবারের অনুশীলন শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে ফর্ম নিয়ে প্রশ্নে পূর্বসূরীকে আগলে রাখেন জাকের আলি।
"দলে তো তিনি (মুশফিক) একা খেলছেন না। তারই যে রান করতে হবে…রান সবারই করতে হবে। হয়তো তিনি করছেন না, ঠিক আছে। যে কারও সঙ্গেই হতে পারে। তারই যে প্রতিদিন রান করতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। সবারই রান করতে হবে।"
সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অষ্টম উইকেটে হাসান মাহমুদকে নিয়ে ৯১ বলে ৩৫ রানের জুটি গড়েন জাকের। লেজের সারির ব্যাটসম্যান হয়েও ৫৮ বল খেলেন হাসান (১২ রান)। সবার কাছ থেকে এই লড়িয়ে মানসিকতা দেখতে চান জাকের।
"ব্যাটসম্যান যতজন আছে, সবার দায়িত্ব নিতে হবে, রান করতে হবে। রান না করলেও অন্তত ওই লড়াইটা দেখাতে হবে। হাসান যেমন সবশেষ ইনিংসে... ওর ব্যাটিং, ও যে লড়াইটা করেছে, ভালো লেগেছে। এরকম ইন্টেন্ট থাকল... সবাই প্রতিদিন রান করবে না। অন্তত সবাই যেন ওই চেষ্টাটা করে। তা করলেই বড় রান করা সম্ভব।"
সেই চেষ্টা গত ১২ ইনিংস ধরেই করছেন মুশফিক। কিন্তু রানের দেখা পাচ্ছেন না। চট্টগ্রাম টেস্টেও যদি না হাসে তার ব্যাট, তাহলে নিশ্চিতভাবে প্রশ্ন উঠবে একাদশে তার জায়গা নিয়েও।
আরএ/এসএন