মুরগির ডিমের রং বিভিন্ন হয় কেন?

আমরা সাধারণত মুরগির ডিম বলতে সাদা বা বাদামি খোলসের ডিমকেই বুঝি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুরগির ডিম হতে পারে ক্রিম, গোলাপি, নীল, এমনকি সবুজ রঙেরও। কিছু ডিমে আবার খোলসে দাগও দেখা যায়। প্রশ্ন হলো—এই বৈচিত্র্যের কারণ কী? কেন একেক মুরগি একেক রঙের ডিম পাড়ে?

রঙের সূত্র মুরগির কানের লতিতে

টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির কলেজ অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেসের পোলট্রি বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি আর্চার জানান, ডিমের রং নির্ভর করে মুরগির জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর। তবে মজার বিষয় হলো, মুরগির কানের লতির দিকে তাকিয়ে বোঝা যায় সে কী রঙের ডিম পাড়বে।

আর্চার বলেন, সাধারণভাবে সাদা কানের লতির মুরগি সাদা ডিম পাড়ে। কারণ, সব ডিমই শুরুতে সাদা থাকে—কারণ খোলস তৈরি হয় ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দিয়ে। পরে মুরগির জিন থেকে নির্গত রঞ্জক পদার্থ খোলসে জমা হয়ে ডিমের রং তৈরি করে।

সাদা কানের লতির পাশাপাশি যেসব মুরগির পালকও সাদা, তারা সাধারণত সাদা ডিম পাড়ে। আর গাঢ় কানের লতি ও পালকওয়ালা মুরগিরা রঙিন ডিম পাড়ে।

ডিম গঠনের ধাপ

ডিম তৈরি হয় ডিম্বাশয় থেকে ডিমকোষ নির্গত হয়ে ‘ওভিডাক্ট’ নামের এক নালিতে প্রবেশ করার মাধ্যমে। পুরো প্রক্রিয়াটি পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হয় এবং এতে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। এই প্রক্রিয়ার চতুর্থ ধাপে ডিমের খোলসে রঞ্জক জমা হয়, যা ডিমের বাহ্যিক রং নির্ধারণ করে।

কোন মুরগি কোন রঙের ডিম পাড়ে?

• হোয়াইট লেগহর্ন: সাদা ডিম
• রোড আইল্যান্ড রেড, প্লাইমাউথ রক: বাদামি ডিম (রঞ্জক: প্রোটোপর্ফিরিন)
• আমেরাউকানা, আরাউকানা, দংশিয়াং, লুশি: নীল বা নীলাভ সবুজ ডিম (রঞ্জক: ওসায়ানিন)
• বাদামি ও নীল ডিম পাড়া মুরগির সংকর প্রজাতি জলপাই রঙের ডিম পাড়ে।
• অন্যান্য রঙিন ডিম পাড়া মুরগি: ব্যারেড রক, ওয়েলসামার, মারান।

দাগযুক্ত ডিম কেন হয়?

খোলসে যে দাগ দেখা যায়, তা মূলত অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমে তৈরি হয়। এটি হতে পারে খোলস গঠনের সময়ে ত্রুটি, শেল গ্ল্যান্ডের সমস্যার কারণে অথবা অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের জন্য। অনেক সময় দাগযুক্ত খোলস সাধারণ খোলসের চেয়ে আরও শক্তিশালী হতে পারে।

রং ও গঠনের পরিবর্তনের পেছনের কারণ

যদিও ডিমের রং নির্ভর করে জিনের ওপর। তবুও মুরগির বয়স, খাদ্য, পরিবেশ এবং মানসিক চাপও খোলসের রং ও গঠনে প্রভাব ফেলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে বাদামি ডিম পাড়া মুরগির ডিম বড় হয় এবং রং কিছুটা হালকা হতে পারে।

কুসুমের রঙের রহস্য

ডিমের খোলসের রঙের সঙ্গে কুসুমের রঙের কোনো সম্পর্ক নেই। কুসুমের রং নির্ভর করে মুরগির খাদ্যাভ্যাসের ওপর। যারা হলুদ-কমলা রঙের উদ্ভিদ খায়, তাদের কুসুম হয় গাঢ় কমলা। আর যারা শস্যজাত খাবার খায়, তাদের কুসুম হয় হালকা হলুদ।

গাঢ় কুসুম মানেই বেশি পুষ্টি নয়, তবে মাঠে চরে বেড়ানো মুরগির ডিমে থাকে বেশি ওমেগা-৩, ভিটামিন এবং কম কোলেস্টেরল।

দুটি কুসুমের ডিম

কখনো কখনো একটি ডিমে দুটি কুসুম দেখা যায়, যাকে অনেকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করেন। আসলে এটি ঘটে যখন মুরগির শরীর থেকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি ডিমকোষ বের হয়। তরুণ মুরগিদের মধ্যেই এ ঘটনা বেশি দেখা যায়, কারণ তখন তাদের প্রজননব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি।

মুরগির ডিমের রঙ ও গঠন শুধু তার জাত নয়, বরং খাদ্য, পরিবেশ, বয়স ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোরও প্রতিফলন। তাই ডিমের রঙ দেখে কখনোই তার পুষ্টিগুণ নির্ধারণ করা উচিত নয়।

এফপি/টিএ 

Share this news on: