স্বর্ণ পাচার মামলায় আটক ভারতীয় অভিনেত্রী জামিন পাবেন না এক বছর

চলতি বছরের ৩ মার্চ বেঙ্গালুরুর বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন কন্নড় অভিনেত্রী রান্যা রাও। পরে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা এবং ২ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সোনা। এই সব টাকা ও সোনার কোনও রসিদ বা উৎসের কথা জানাতে পারেননি অভিনেত্রী। পরে দুবাইয়ের শুল্ক দপ্তর জানিয়ে দেয়, গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তিনি দুবাই থেকে সোনা কিনেছিলেন। এবং ঘোষণা করেছিলেন, ওই সোনা নিয়ে তিনি জেনেভায় যেতে চান। যদিও দেখা গিয়েছে, সোনা নিয়ে তিনি ভারতেই ফিরেছিলেন।

স্বর্ণ চোরাচালানের দায়ে অভিযুক্ত রান্যা বর্তমানে কারাগারে আছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯৭৪ সালের বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ ও চোরাচালান প্রতিরোধ আইনে তার নামে একটি মামলা হয়েছে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক গোয়েন্দা ব্যুরো (সিইআইবি) এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (ডিআরআই) সুপারিশ অনুযায়ী অভিনেত্রী রান্যা রাও ও সংশ্লিষ্ট অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করেছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ ও চোরাচালান প্রতিরোধ আইন প্রয়োগের ফলে অভিযুক্ত রান্যা রাও এক বছরের মধ্যে জামিন পাওয়ার কোনো সুযোগ পাবেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, এই আইন তাদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়, যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার চোরাচালানে জড়িত না হন। তবে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সহযোগিতা না করলেও এই আইন প্রয়োগ করা হয়। সূত্রটি আরও জানায়, রান্যা রাও ও মামলার অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বারবার জামিন নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো এই পদক্ষেপ নিয়েছে। মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত তরুণ রাজু ও সাহিল সাকারিয়া জৈনের বিরুদ্ধেও এই আইনে মামলা করা হয়েছে।

রান্যা রাও কর্ণাটকের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা রামচন্দ্র রাওয়ের সৎকন্যা। গত ৩ মার্চ ১৪ দশমিক ২ কিলোগ্রাম স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে তিনি গ্রেপ্তার হন। এই স্বর্ণের মূল্য আনুমানিক ১২ দশমিক ৫৬ কোটি রুপিরও বেশি। অভিনেত্রী রান্যা রাও ও এই মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত ব্যক্তি বর্তমানে বেঙ্গালুরু কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন।

এই মামলার তদন্ত করছে ডিআরআই, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ও কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই)। এর আগে এই মামলায় ডিজিপি রামচন্দ্র রাওয়ের কোনো সংশ্লিস্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য রাজ্য সরকার একজন সিনিয়র আইএস অফিসারের নেতৃত্বে বিশেষ দল গঠন করেছিল। সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

ডিআরআইয়ের তদন্তে স্বর্ণ চোরাচালানের এই মামলায় অভিনেত্রী রান্যা রাওয়ের বিরুদ্ধে হাওয়ালা লেনদেনে জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। ডিআরআই ইকোনমিক অফেন্সের জন্য গঠিত বিশেষ আদালতে সাহিল জৈনের গ্রেপ্তারসংক্রান্ত রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বর্ণ ব্যবসায়ী সাহিল সাকারিয়া জৈন ও রান্যা রাও একটি হাওয়ালা চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তদন্তে আরও জানা গেছে, জৈনের সহায়তায় রান্যা রাও ৪৯ দশমিক ৬ কিলোগ্রাম সোনা বিক্রি করেন এবং ৩৮ দশমিক ৪ কোটি রুপির হাওয়ালা অর্থ দুবাইয়ে স্থানান্তর করেন।

হাওয়ালা হলো কালো টাকার অবৈধ লেনদেন। আরবিতে এই শব্দের অর্থ কোনো কিছু পাঠানো। ভারতের অনেকে চোরাকারবারি কালো টাকা ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বর্ণ চোরাচালান করে থাকেন। সাধারণত এটাই হাওয়ালা নামে পরিচিত।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বৃষ্টিতে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রাঘাতে গৃহবধূর মৃত্যু Apr 27, 2025
img
লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসে ভারতীয়দের হামলা Apr 27, 2025
img
বিজয়ের দলে জায়গা পাওয়ার প্রক্রিয়া আদর্শ নয় :সিমন্স Apr 27, 2025
img
এসআই নিয়োগের ফল প্রকাশ, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৫৯৯ জন Apr 27, 2025
img
ববিতে শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি, রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা Apr 27, 2025
img
ক্ষমা চেয়ে যা বললেন রুডিগার Apr 27, 2025
img
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ:পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Apr 27, 2025
img
দুদকের নজরে ২ উপদেষ্টার সহকারীদের দুর্নীতির অভিযোগ Apr 27, 2025
img
শুধু মায়ার কারণেই একটা সম্পর্ক টিকে থাকে: অপু বিশ্বাস Apr 27, 2025
img
ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্সকে স্নাতক সমমানের দাবিতে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ Apr 27, 2025