ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বিপর্যস্ত ভূস্বর্গ কাশ্মীর। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর গোটা ভারতে মসজিদের মিনারে মিনারে উঠেছিল প্রতিবাদ ও প্রার্থনার ধ্বনি। দিল্লির শাহী মসজিদ থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, হায়দ্রাবাদসহ দেশের নানা প্রান্তে লাখো মুসলমান পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডে নিহতদের জন্য দোয়া করেছেন এবং শোক প্রকাশ করেছেন।
ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ আবারও প্রমাণ করেছে— মোদি সরকারের ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি জনগণের মন থেকে বিভেদ তৈরি করতে পারেনি। বরং যেকোনো সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে তারা সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে।
ভারতে কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর সাধারণত মুসলিমদের দিকেই সন্দেহের বিষাক্ত আঙুল ওঠে। এ বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা জোরালো দাবি তুলেছেন, সন্ত্রাসবাদের সাথে কখনো ইসলামের নাম জড়ানো চলবে না। তারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ইসলামে সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান নেই।
নামাজের পর দুঃখ ও বিষাদের ছাপ নিয়ে মুসল্লিরা বলেছেন, কাপুরুষোচিত এই হামলা জম্মু ও কাশ্মীরের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। পর্যটকদের লক্ষ্য করে চালানো এই হামলার বিরুদ্ধে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং সন্ত্রাসীদের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। তারা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো সহায়তা অতীতে হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের নানা প্রান্তে প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জোরালো হয়েছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদকে অর্থ ও মদত দিচ্ছে ইসলামাবাদ। যদিও পাকিস্তান এসব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
জম্মু-কাশ্মীরের ইমামরা জুমার খুতবায় রক্তক্ষয়ী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, যারা ইসলামের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাস ছড়ায়, তারা প্রকৃতপক্ষে ধর্মের অপমান করে।
হায়দ্রাবাদের এক ইমাম কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন, "নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি জাতির শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আমরা দোয়া করেছি।" দেশের বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিরা দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে একত্রিত হয়েছেন এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা আর না ঘটে।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে, তিনি যেন দেশকে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে এগিয়ে নিয়ে যান।
কাশ্মীর সংকটে উগ্রপন্থী শক্তির উস্কানি ও রাজনৈতিক হটকারিতার কারণে ভারত ও পাকিস্তান আবারও সংঘাতের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের সর্বত্রই চলছে উত্তপ্ত আলোচনা। এমন কঠিন সময়ে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারানো মানুষ ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারতের শান্তিপ্রিয় মুসলিম সম্প্রদায়।
আরএম/এসএন