কিছু সিনেমা শুধু ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, কিছু সিনেমা বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, আর সবগুলো সিনেমা মিলিয়ে সিনেমা দেখার ধারণা পরিবর্তন করে দিয়েছে। ১৯১৫ সালে বিতর্কিত প্রথম "ব্লকবাস্টার"-এর মাধ্যমে শুরু হওয়া এই যাত্রা আজকের মহাকাব্যিক যুদ্ধ ও বিপ্লবের দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। আসুন, দেখে নিই এমন কিছু সিনেমার গল্প, যেগুলো শুধু আয়ে নয়, সিনেমার ভাষায়ও বিপ্লব ঘটিয়েছে।
১. দ্য বার্থ অব আ নেশন (১৯১৫)
বক্স অফিস আয়: ~$৫ মিলিয়ন (তৎকালীন সময়)
এটি ছিল প্রথম ব্লকবাস্টার এবং চরম বিতর্কিত। ডি. ডব্লিউ. গ্রিফিথের সাইলেন্ট এপিক সিনেমা শিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা করে। এই ছবিটি এখনও সিনেমার ভাষায় গভীর প্রভাব রেখে চলেছে।
২. গান উইথ দ্য উইন্ড (১৯৩৯)
বক্স অফিস আয়: $৩২ মিলিয়ন (মূল রিলিজে)
এটি সিনেমার ইতিহাসে একটি বিশাল মাইলফলক। প্রেম, যুদ্ধ এবং বিশালতার এক চমৎকার মিশ্রণ, যার বিখ্যাত ডায়ালগ "টুমরো ইজ আ নাদার ডে" আজও দর্শকদের মুখে মুখে ফিরছে।
৩. দ্য সাউন্ড অব মিউজিক (১৯৬৫)
বক্স অফিস আয়: $১১৪ মিলিয়ন
জুলি অ্যান্ড্রুজের গানে ভরা অস্ট্রিয়ান পাহাড়ের দৃশ্য আজও শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। এই ছবি বক্স অফিসে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।
৪. দ্য গডফাদার (১৯৭২)
বক্স অফিস আয়: $১২৭ মিলিয়ন–$১৪২ মিলিয়ন
এই মাফিয়া থ্রিলার শুধু একটি গেম চেঞ্জার ছিল না, বরং সিনেমার নতুন শৈলী সৃষ্টি করেছিল। ক্রাইম ও পরিবারকে একত্রিত করে এটি সিনেমার ইতিহাসে স্থায়ী স্থান করে নিয়েছে।
৫. জস (১৯৭৫)
বক্স অফিস আয়: $১৯৪ মিলিয়ন
স্পিলবার্গের তৈরি প্রথম সামার ব্লকবাস্টার গোটা পৃথিবীকে শিখিয়ে দিয়েছে, হাঙর কতটা ভয়ংকর হতে পারে। এই ছবি সিনেমার প্রতি দর্শকদের আগ্রহ এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।
৬. স্টার ওয়ার্স (১৯৭৭)
বক্স অফিস আয়: $৪১০ মিলিয়ন → $৫৩০ মিলিয়ন (রিরিলিজসহ)
এই সিনেমা শুধুমাত্র একটি মহাকাব্যিক দুনিয়া তৈরি করেনি, বরং টিকিট কাউন্টার ও খেলনা দোকানকে এক বিশাল ক্যাশ মেশিনে পরিণত করেছে। গ্যালাক্সির সেই অজানা পৃথিবী আজও দর্শকদের মনের মধ্যে জীবন্ত।
৭. ই.টি. দ্য এক্সট্রা-টারেস্ট্রিয়াল (১৯৮২)
বক্স অফিস আয়: $৬১৯ মিলিয়ন–$৬৬৪ মিলিয়ন
স্পিলবার্গের কোমল এলিয়েন গল্পটি ৮০-এর দশকে ছিল জনপ্রিয়তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গান। এটি একটি অদ্ভুত বন্ধুত্বের গল্প হয়ে ওঠে, যা সিনেমার এক নতুন আঙ্গিক সৃষ্টি করেছে।
৮. জুরাসিক পার্ক (১৯৯৩)
বক্স অফিস আয়: $৯১২ মিলিয়ন
ডাইনোসর ও স্পিলবার্গের যুগান্তকারী সংমিশ্রণে সিনেমার ইতিহাস নতুন করে লেখা হয়। এটি দর্শকদের এক নতুন বিশ্বের স্বাদ দিয়েছিল এবং সিনেমার জগতে বিশাল পরিবর্তন এনেছিল।
৯. টাইটানিক (১৯৯৭)
বক্স অফিস আয়: $১.৮৪ বিলিয়ন
এই সিনেমার সাফল্য শুধু বক্স অফিসে নয়, বিশ্বের প্রতিটি দর্শককে এক অমলিন আবেগে ডুবিয়ে দিয়েছিল। ভালোবাসা ও হারানোর গল্পটি এখনো পৃথিবীজুড়ে এক অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলছে।
১০. অ্যাভাটার (২০০৯)
বক্স অফিস আয়: $২.৯২ বিলিয়ন (রিরিলিজসহ)
৩ডি সিনেমার নতুন যুগের সূচনা করা এই সিনেমাটি এখনও বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা হিসেবে পরিচিত। এই ছবির মাধ্যমে ইমারসিভ সিনেমার এক নতুন ধারা শুরু হয়।
১১. অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম (২০১৯)
বক্স অফিস আয়: $২.৭৯৭ বিলিয়ন
মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের দশ বছরের চূড়ান্ত সফলতা ছিল এই ছবি। যদিও এটি সাময়িকভাবে "অ্যাভাটার"-কে টপকেছিল, তবে এখন এটি দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে।
বক্স অফিস পরিসংখ্যান কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে সময় এবং ইনফ্লেশন অনুযায়ী, তবে এই সিনেমাগুলোর প্রভাব এবং তাদের অর্জন অস্বীকার করা সম্ভব নয়। এগুলো সিনেমা শিল্পে এক নতুন যুগের জন্ম দিয়েছে এবং দর্শকদের মনের মধ্যে চিরকালীন স্থান করে নিয়েছে।
আরএ