বাজেটে ধনীদের সুবিধা দেবে, গরিব-মধ্যবিত্তদের নয়: সিপিডি

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার একদিন পর এক সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বলেছে, দেশের মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের মানুষ নয়, যারা অর্থনৈতিক অপশাসনের সুবিধাভোগী, নতুন অর্থবছরের বাজেট তাদেরই সুবিধা দেবে। নতুন বাজেটে কৃষককে ধানের লোকসান বাবদ প্রণোদনা দেয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের করমুক্ত আয়সীমাও বাড়ানো হয়নি। কিন্তু সম্পদের সারচার্জের সীমায় ছাড় দেয়া হয়েছে। ধনীরা ফ্ল্যাট কিনতেও কর ছাড় পেয়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকেরাও নগদ ভর্তুকি পেয়েছেন।

শুক্রবার বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরতে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে সংস্থাটি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছেন, অর্থমন্ত্রী এবার অনেক লক্ষ্যের ক্ষেত্রেই বাস্তবমুখী হয়েছেন। ফলে আগের দু-একটি বছরের তুলনায় রাজস্ব, বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা কম। তিনি কর বর্হিভূত আয় বাড়ানোর উদ্যোগ, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে উন্নয়ন ব্যয় ৭ শতাংশ রাখা, শত শত নতুন প্রকল্প না নেয়াসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানান। পুঁজিবাজারে নেয়া পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন নেই বলে উল্লেখ করেন। তবে এও বলেন, সুশাসন ছাড়া পুঁজিবাজারের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। ভ্যাট আইনে জরুরি সেবা ও পণ্যে ছাড় দেয়ার বিষয়টিও ঠিকই আছে বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গরিব মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তার প্রতিফলন তিনি এ বাজেটে দেখছেন না। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ আগামীতে পৌঁছে দেওয়ার যে অঙ্গীকার নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, তা পূরণের স্পষ্ট কোনো রূপরেখা বা কর্মসূচি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেটে রাখা হয়নি।

বাজেটে বেশি সুফল কারা পাবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা স্বচ্ছ যে বাজেট উচ্চ আয়ের মানুষকে অনেক বেশি সুযোগ দিচ্ছে। অল্প আয়ের মানুষের জন্য প্রান্তিকভাবে এক ধরনের একটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত, বিশেষ করে বিকাশমান মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এটা থেকে খুব বেশি উপকৃত হবেন না।’

শিক্ষা-স্বাস্থ্যে ব্যয় মোট জিডিপি অনুপাতে বৃদ্ধি না পাওয়ার বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা ব্যাংকক সিঙ্গাপুরে গিয়ে শিক্ষা নিতে পারে না ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারে না, তাদের জন্য আপনি কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? গণপরিবহন সংকটে যারা তাদের জন্য কী গণপরিবহন তৈরি হচ্ছে কি না, তাদের শিশুরা কি সেরকম মানে উচ্চ শিক্ষা পাচ্ছে কি না, এটিই বড় বিষয়।

দেবপ্রিয় বলেন, ‘উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া নির্ভর করছে বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের জন্য আমরা কি করতে পারব, তার ওপর। বিকাশমান মধ্যবিত্তই হলো চালিকাশক্তি। চিন্তা, চেতনা, উপার্জন, বুদ্ধিমত্তা, সবক্ষেত্রে এটি হলো চালিকা শক্তি। সেই চালিকা শক্তিকে যদি বাদ দেয়া হয়, তাহলে তা ইশতেহারের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।’

‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশা সামনে রেখে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সামনে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

দেবপ্রিয় বলেন, যে সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, সে সমাজ আজ হোক কাল হোক টেকে না, আগাতে পারে না। যেভাবে বাংলাদেশে বৈষম্য বাড়ছে, তাতে ৭, ৮, ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি টেকানো কষ্টকর হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে।

করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা ও তিন কোটি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যের বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপনারা বলছেন যে, করদাতার সংখ্যা ১ কোটি হবে, বলা হয়েছে শিগগিরই হবে। শিগগিরই কবে? কালকে? ৩ বছর পর? পাঁচ বছর পর? কবে। কর্মসূচি দেওয়া হলে তার বিশ্বাসযোগ্যতা লাগে। আপনি যখন বলেন আমি এটা দিয়ে এই অর্জন করতে চাচ্ছি, এই অর্জন করার জন্য এই কৌশল নিয়েছি। এই কৌশলকে কার্যকর করার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছি। অর্থ দিচ্ছি প্রতিষ্ঠান দিচ্ছি। ইত্যাদি। এটা যতক্ষণ না বলা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমি অর্থনীতিবিদ হিসেবে আশ্বস্ত হই না। সাধারণ নাগরিক খুশি হতে পারে।’

অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সংলাপ পরিচালক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খানসহ গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে সাকিবের দুবাই ক্যাপিটালস Jul 14, 2025
img
লন্ডনে উড্ডয়নের পরই ভেঙে পড়ল বিমান Jul 14, 2025
img
মাদারীপুরে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ১ জনের Jul 14, 2025
img
ফরিদপুরে পাসপোর্ট করতে এসে আটক ৩ রোহিঙ্গা নাগরিক Jul 14, 2025
img
মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শেকৃবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৩ Jul 14, 2025
img
গাজীপুরে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় বিএনপি নেতা কারাগারে Jul 14, 2025
img
ঐশ্বরিয়ার গুণের প্রশংসা করেছিলেন শাশুড়ি জয়া বচ্চন Jul 14, 2025
img
দিলজিতের ‘পাঞ্জাব ৯৫’ ছবি ঘিরে নতুন বিতর্ক! Jul 14, 2025
img
আরও ২ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা দিলেন মিটফোর্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা Jul 14, 2025
img
পিএসজিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতল চেলসি Jul 14, 2025
img
ক্যারিয়ার বাঁচাতে অনৈতিক কাজে অভিনেত্রী! গ্রেফতার হয়েছিলেন হোটেল থেকে Jul 14, 2025
img
উইম্বলডনে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পেলেন সিনার Jul 14, 2025
img
পুলিশের পরিচয় দিয়ে খাদ্য কর্মকর্তাকে অপহরণ, ৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার Jul 14, 2025
img
নড়াইলে আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতাকর্মী কারাগারে Jul 14, 2025
img
জমে উঠেছে লর্ডস টেস্ট, শেষ দিনে কে হাসবে বিজয়ের হাসি? Jul 14, 2025
img
'খারাপ ব্যাটিং ও বাংলাদেশের দারুণ ফিল্ডিংয়ের কারণে আমরা হেরেছি' Jul 14, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব Jul 14, 2025
img
ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল কি না, জানালেন শেহবাজ Jul 14, 2025
img
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে: বিশ্বব্যাংক Jul 14, 2025
img
আমি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করি: শামীম Jul 14, 2025