গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা!

গাজার নুসরেইত এলাকায় একটি কমিউনিটি কিচেনে বাস্তুচ্যুত বৃদ্ধা উম মুহাম্মদ আল-তালালকা পাঁচ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, শুধু তার সন্তান ও নাতিদের মুখে খাবার তুলে দিতে। — রয়টার্স

গত ১৮ মাসের সংঘাতের মধ্যে এসব কমিউনিটি কিচেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে বিনামূল্যে খাবার দিয়ে এসেছে। তবে এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে খাবার জোগাড় করাই কঠিন হয়ে উঠছে এবং শিগগিরই সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

একাধিক সহায়তাকারী সংগঠন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রায় ডজনখানেক স্থানীয় কমিউনিটি কিচেন বন্ধ হওয়া ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি গাজায় ত্রাণ ঢুকতে না দেওয়া হয়, তাহলে সম্ভবত কয়েক দিনের মধ্যেই এই কমিউনিটি কিচেনগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে গাজায় থাকা ২৩ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশের জন্য নিয়মিত খাবারের একমাত্র উৎসটিও বন্ধ হয়ে যাবে।

তালালকা বলেন, ‘আমরা দুর্ভিক্ষে ভুগছি, একেবারে বাস্তব দুর্ভিক্ষ।’ গাজার মুঘরাকা শহরে থাকা তার বাড়িটিও ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি আজ সকাল থেকে কিছুই খাইনি।’

গাজা সিটির আল-সালাম ওরিয়েন্টাল ফুড কমিউনিটি কিচেনের সালাহ আবু হাসীরা আশঙ্কা করছেন, তিনি এবং তার সহকর্মীরা প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষের জন্য যে খাবার রান্না করেন, হয়তো আজকের খাবারটি হতে পারে তাদের জন্য শেষ রান্না করা খাবার।

গাজা থেকে টেলিফোনে আবু হাসীরা বলেন, আমাদের ব্যাপক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। হয়তো আগামী এক সপ্তাহ বা তার কম সময়ের মধ্যে আমাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হতে পারে।

গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিদের জন্য সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতির সময় যে খাদ্য মজুত করা হয়েছিল, তা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এটি গাজা উপত্যকার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকালীন অবরোধগুলোর একটি।

কমিউনিটি কিচেনগুলো এক কক্ষের ছোট উদ্যোগ থেকে শুরু করে নিয়মিত রেস্তোরাঁ পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের হতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার মানুষ প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র নিয়ে বিনামূল্যে খাবার সংগ্রহ করতে আসছেন। গত কয়েক মাস ধরে এ দৃশ্য সাধারণ চিত্রে পরিণত হয়েছে।

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র মুখপাত্র জুলিয়েট তৌমা রয়টার্সকে বলেন, কমিউনিটি কিচেনগুলো থেকে গাজাবাসীর খাবার সংগ্রহণ বেড়েই চলেছে। কারণ খাবার পাওয়ার জন্য আর কোনো উপায় নেই। যদি এগুলো বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে।

ফিলিস্তিনের বেসরকারি সংস্থা নেটওয়ার্টকের (পিএনজিও) পরিচালক আমজাদ শাহা বলেন, গাজায় আমাদের ৭০ থেকে ৮০টি কমিউনিটি কিচেন চালু আছে। কিন্তু আগামী চার থেকে পাঁচদিনের মধ্যে এগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে গাজায় প্রায় ১৭০টি কমিউনিটি কিচেন চালু ছিল এবং সোমবার অতিরিক্ত ১৫টি কিচেন বন্ধ হয়ে গেছে।

গাজার মানুষের পুষ্টিগত অবস্থা দিন দিন আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তর সোমবার রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজা জুড়ে শিশুদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজারের মতো তীব্র অপুষ্টির ঘটনা শনাক্ত করেছে। যার মধ্যে ১ হাজার ৬০০টি হচ্ছে চরম মাত্রার তীব্র অপুষ্টি।

জাতিসংঘের মানবিক সম্পর্কিত সমন্বয়ক অফিস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় চরম মানবিক সংকটের মধ্যে লুটপাটের ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া সপ্তাহান্তে সশস্ত্র ব্যক্তিরা দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি ট্রাক এবং গাজা সিটিতে একটি গুদাম লুট করেছে বলে জানা গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্তত ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

জেরুজালেম থেকে ‘ডক্টরস উইদআউট বর্ডারস (এমএসএফ) এর মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর জুলি ফোকন রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা শিশুদের মধ্যে মাঝারি থেকে চরম তীব্র অপুষ্টির ঘটনা দেখতে পাচ্ছি, এবং একই সঙ্গে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরাও চরম সমস্যায় পড়েছেন। তারা নিজেরাই অপুষ্টিতে ভুগছেন বা তাদের ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা অত্যন্ত কম।

হামাস পরিচালিত গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস শুক্রবার জানিয়েছে যে, দুর্ভিক্ষ আর সম্ভাব্য হুমকি নয়, এটি এখন বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে ৫২ জন মারা গেছে, যার মধ্যে ৫০ জনই শিশু।

আবু হাসীরা জানান, খাদ্য ‘কাল্পনিক দামে’ বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) শুক্রবার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির সময়ের তুলনায় খাদ্যের দাম ১৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের মজুদ এখন পুরোপুরি শেষ।

পূর্বে ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, গাজার জনগণের জন্য যথেষ্ট ত্রাণ এখনও রয়েছে, তবে তা কখন এবং কীভাবে পুনরায় সরবরাহ করা হবে, সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্টতা বার্তা দেয়নি। এ বিষয়ে নেতানিয়াহুর দপ্তর কোনো মন্তব্য করেনি। 

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘মার্চ টু গোপালগঞ্জে’ রাষ্ট্রের কত অর্থ ব্যয় হয়েছে, প্রশ্ন মাসুদ কামালের Jul 19, 2025
img
ভোলার চরফ্যাশনে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার অবৈধ জাল ও পলিথিন জব্দ Jul 19, 2025
img
কেন প্রেম ভেঙেছিল আলিয়া- সিদ্ধার্থের! Jul 19, 2025
img
আগামী পাঁচ দিনে বাড়বে বৃষ্টির প্রবণতা, উত্তরাঞ্চলে ভারি বর্ষণের সতর্কতা Jul 19, 2025
img
বিএনপিকে খেপিয়ে কীভাবে মাঠে টিকে থাকবেন, জানি না : ইলিয়াস হোসেন Jul 19, 2025
img
সিনেমা হলগুলো দর্শক হারানোর কারণ জানালেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি! Jul 19, 2025
img
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ইতিহাস’ গড়ল জামায়াত! Jul 19, 2025
img
‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ শো এর মাধ্যমে সবচেয়ে দামি সঞ্চালক হতে যাচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন! Jul 19, 2025
img
কুমিল্লার মুরাদনগরে জনসভা করার ঘোষণা দিলেন ইশরাক Jul 19, 2025
img
অবসর ভেঙে আবারও ফিরেছেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার! Jul 19, 2025
img
সৈকতে কারিনার ‘লুঙ্গি ড্যান্স’, নেটদুনিয়ায় ঝড়! Jul 19, 2025
img
জামায়াতের সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তায় ১২ হাজার পুলিশ, রয়েছে র‍্যাব-ডিবিও Jul 19, 2025
img
বাসা থেকে অভিনেত্রীর মরদেহ উদ্ধার Jul 19, 2025
img
গায়ানার কাছে হেরে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো রংপুর রাইডার্সের Jul 19, 2025
img
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা ট্রাম্পের Jul 19, 2025
img
নির্বাচনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ : আব্দুন নূর তুষার Jul 19, 2025
img
মুক্তির এক বছর আগেই শুরু নোলানের 'দ্য ওডিসি'র টিকিট বিক্রি! Jul 19, 2025
img
ঢাকায় সমাবেশে আসার পথে সড়কে প্রাণ গেল জামায়াত নেতার Jul 19, 2025
img
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে জাতীয় সমাবেশের প্রথম পর্ব শুরু করল জামায়াত Jul 19, 2025
img
১৭ বছরের পুরোনো বাটন ফোনই সঙ্গী অভিনেতা ফাহাদের, পেছনে রয়েছে চমকপ্রদ কারণ! Jul 19, 2025