বছর খানেক ধরেই ভারতীয় বিনোদুনিয়ায় পাকিস্তানি শিল্পীদের নিষিদ্ধ করে দিয়েছে সিনে সংগঠন। বিশেষ করে পুলওয়ামা কাণ্ডের পর থেকে এদেশে পাক তারকাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের রায়ে শাপমোচন ঘটলেও তার পর আর সেভাবে কোনও পাক শিল্পীকে এদেশের সিনেজগতে কাজ করতে দেখা যায়নি। যদিও বা ফাওয়াদ খান শিকে ছিড়তে চলেছিলেন, তবে পহেলগাম সন্ত্রাসের পরল পাকিস্তানের কোনও শিল্পীকেই ভারতের চৌকাঠ পেরতে দিতে নারাজ সিনে সংগঠনগুলি। জঙ্গিহামলার জেরে প্রতিবেশী দেশের শিল্পীদের প্রতি এই বয়কট রব ওঠা কতটা যুক্তিযুক্ত? প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই মুখ খুললেন জাভেদ আখতার।
এক সাক্ষাৎকারে প্রবীণ শিল্পীর মন্তব্য, “পয়লা প্রশ্ন হল, আমাদের এখানে পাকিস্তানি শিল্পীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত কিনা? এর দুটি উত্তর আছে, উভয়ই সমানভাবে যুক্তিসঙ্গত। আমার মনে হয়, সম্পর্ক আর সম্মানের বিষয়টা সবসময়ে একতরফা থেকেছে। নুসরাত ফতেহ আলি খান, গুলাম আলি, নূর জাহান ভারতে যখন এসেছিলেন, আমরা তাদের দারুণভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলাম। এরপর ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ এলেন। যিনি উপমহাদেশের একজন বড় কবি। আদতে পাকিস্তানের বাসিন্দা হলেও তিনি যখন অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে ভারতে এসেছিলেন, তখন তাকে রীতিমতো রাষ্ট্রপ্রধানের মতো সম্মান দিয়েছিল সরকার। এর প্রতিদান কখনও দেওয়া হয়নি! না মানে, পাকিস্তানের নাগরিকদের প্রতি আমার কোনও অভিযোগ নেই।”
এরপরই জাভেদ আখতারের সংযোজন, “পাকিস্তানের বড় বড় কবিরা লতা মঙ্গেশকরের গানের জন্য লিখেছিলেন। ষাট-সত্তরের দশকে তো ভারত এবং পাকিস্তান, দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন লতাজি, কিন্তু কেন কোনোদিন পাকিস্তানে ওর কোনও গান রেকর্ড হল না? পাকিস্তানের মানুষের প্রতি আমার এক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ নেই। ওরা লতা মঙ্গেশকরকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। কিন্তু কিছু বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল সিস্টেম। যেটা সম্পর্কে আমার জানা নেই। এটাকেই আমি ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক বলছি। এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গ হল, আমরা যদি পাকিস্তানি শিল্পীদের বয়কট করি, তাহলে পাকিস্তানের কাকে খুশি করছি আমরা? সেনাবাহিনী এবং মৌলবাদী, এটাই কি তারা চায়? ওরা দূরত্ব তৈরি করতে চায়। আর এটাই ওদের জন্য উপযুক্ত।” পদবীর জেরে একাধিকবার দেশদ্রোহী খোটার মুখে পড়েছেন জাভেদ। পালটা জবাব দিতেও ছাড়েননি। এবার পহেলগাম সন্ত্রাসের পর জাভেদ আখতার সাফ জানিয়েছেন যে, আপাতত এমন আবহে তাঁর সায় নেই পাক শিল্পীরা এদেশে কাজ করুক।
পাকিস্তানকে আর রেয়াত নয়, পহেলগামতে জঙ্গি হামলার পরই ভারত সরকারের তরফে প্রতিবেশী দেশকে কড়া হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বাতিলের পথে সিন্ধু জলচুক্তি। ভারত ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কড়া নির্দেশিকা জারি হয়েছে পাক নাগরিকদের উপর। সন্ত্রাস হামলার পর ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে ভারতীয় বিনোদুনিয়াতেও। পহেলগাম কাণ্ডের জেরে ভারতে বিশ জলে পাক সুপারস্টার ফাওয়াদ খানের ‘আবির গুলাল’ সিনেমার মুক্তি! সুনীল শেট্টি তার সিনেমার মুক্তি বাতিল বাতিল করেছেন ওদেশে। পাক শিল্পীদের শোকপ্রকাশের ‘বহর’ দেখেও চিঁড়ে ভেজেনি। এমন আবহে পাকিস্তানি শিল্পীদের নিষিদ্ধ করতে একজোট ফিল্ম ফেডারেশেন অ্যান্ড টেলিভিশন ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ফেডারেশন অফ ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এপ্লয়িজ। এবার সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে সুর চড়ালেন জাভেদ আখতার।
আরএম/এসএন