লাইফস্টাইল বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের নামে ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছে শতাধিক ভুয়া পেজ ও আইডি। এসব পেজ থেকে প্রতিনিয়ত রোগীদের সঙ্গে চালানো হচ্ছে প্রতারণা, মিথ্যা প্রলোভনে বিক্রি করা হচ্ছে স্পর্শকাতর রোগের ওষুধ। অথচ, মূল প্রতিষ্ঠান জিকে লাইফস্টাইল কখনই কোনো ওষুধ বিক্রি করে না বলে দাবি করছেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির নিজেই।
তার দাবি, নিজস্ব পেজ নিষ্ক্রিয় থাকলেও শতাধিক ভুয়া পেজ থেকে বর্তমানে মোট ৫৭০টি ওষুধ বিক্রির বিজ্ঞাপনমূলক ক্যাম্পেইন চালু রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশতেই ব্যবহার করা হয়েছে অশ্লীল ছবি এবং ভিডিও। এমনকি এগুলোর মাধ্যমে রোগীরা নিয়মিত প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর আফতাবনগরের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ জানান। একইসঙ্গে প্রতারকদের সবধরনের প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকার জন্য মানুষের প্রতি আহ্বান জানান আলোচিত এই চিকিৎসক।
ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “কিছুদিন আগে আমার নামে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল, যেখানে বলা হয় আমার নাম এবং ছবি ব্যবহার করে অশ্লীল ভিডিও এবং কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে। সবশেষ আইনি নোটিশটি প্রত্যাহারও করে নেওয়া হয়েছে। তবে যখনই আইনি নোটিশটি পাঠানো হয়, সঙ্গে সঙ্গেই অনেকগুলো মিডিয়াতে সেই খবরটি প্রচার করা হয়। প্রায় ৫৫টি মিডিয়াতে ফলাও করে বিষয়টি প্রচার করা হয়। এমনকি এর কিছুক্ষণ পর আমার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজটি উধাও হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল আমার মূল পেজটি না থাকার কারণে অসংখ্য মানুষ ভুয়া পেজগুলোকেই আমার বলে মনে করে পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “ভুয়া পেজগুলো থেকে অসংখ্য অশ্লীল ধরনের ভিডিও এবং কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো আমার নামে বিভিন্ন পেজ থেকে যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমার ছবির পাশাপাশি অশ্লীল কিছু ছবি ব্যবহার করছে, যা খুবই আপত্তিকর। তারা আমার পেজ থেকে কিছু ভিডিও কাট করে নিজেদের ভিডিওর সঙ্গে এডিটিং করে সেগুলো প্রচার করছে। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না এই ওষুধগুলোর ভেতরে কী আছে। এজন্য আমি মনে করি এ ধরনের আপত্তিকর বিজ্ঞাপন এবং প্রচারণার ব্যাপারে সবাইকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।”
আলোচিত এই লাইফস্টাইল মডিফায়ার বলেন, “ফেসবুকে প্রতারণার স্বীকার হয়ে প্রতিনিয়ত রোগীরা আমাদের কাছে আসছেন। এসব পেজ থেকে বিভিন্ন স্পর্শকাতর ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ আমরা কেনো ওষুধ বিক্রি করিনা। আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু মানুষের রোগ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী লাইফস্টাইলের পরামর্শ দেওয়া। কিন্তু একটি চক্র আমার ছবি ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।”
এবিষয়ে একাধিকবার থানায় জিডি করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান এ চিকিৎসক। তিনি বলেন, “অসংখ্যবার থানায় অভিযোগ করেছি এসব ভুয়া পেজ নিয়ে। তারা প্রকাশ্যে ওষুধের মতো স্পর্শকাতর জিনিস বিক্রি করছে। প্রশাসন চাইলে খুব সহজেই তাদের বের করতে পারে। কিন্তু এ পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া০ হয়নি।”
ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “আমাদের লাইফস্টাইল ফলো করে অনেকে সুস্থ হচ্ছেন। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরাও আমাদের এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত আমাদের গ্রাহক বাড়ছে। আমাদের এ জনপ্রিয়তার এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে প্রতারক চক্র। তারা ফেসবুকে প্রতিনিয়ত হাজার-হাজার ডলার খরচ করে প্রমোশন করছে।”
তিনি জানান, “ভুল ইনফরমেশনের কারণে আমাদের আসল ফেসবুক পেজটি ডাউন করে দেওয়া হয়েছে। সেটি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এ সপ্তাহের মধ্যে আগের পেজটি ফিরিয়ে আনা হবে।”
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের ওই আইনজীবী সরকারকে একটি নোটিশ পাঠান। নোটিশে ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তাসনিম জারাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এদিন নোটিশে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, লাইকিসহ সব অনলাইন মাধ্যমে অশ্লীল ও পর্নোগ্রাফিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা বন্ধে সব ওয়েবসাইট, লিংক, গেটওয়ে অবিলম্বে বন্ধ করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল।
তবে এরপর গত ২৭ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তাসনিম জারাকে পাঠানো আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়।
নোটিশ প্রত্যাহারের বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার পল্লব সংবাদমাধ্যম বলেন, “সম্প্রতি তাসনিম জারা আমার মক্কেলগণ কর্তৃক পূর্বে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। আমার মক্কেলগণ প্রকাশিত বক্তব্যটি গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করেছেন। তাসনিম জারা তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, তার ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করে ফেক ফেসবুক আইডি এবং ইউটিউব চ্যানেল খুলে অনেকেই প্রতারণা করছে। যেগুলো তার নিজের ফেসবুক আইডি বা ইউটিউব চ্যানেল নয়।”
তিনি আরও বলেন, “তাসনিম জারার বক্তব্যে নোটিশ প্রেরকরা সন্তুষ্ট হওয়ায় নোটিশে রেফারেন্স হিসেবে উল্লিখিত তাসনিম জারার নাম প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইসঙ্গে ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের নামও নোটিশে উল্লেখ থাকায় নোটিশ প্রেরকরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে নোটিশটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।”
এফপি