শ্রমিকের জীবনসংগ্রাম নিয়ে দেখতে পারেন এই ৭ ছবি

আজ মে দিবস। বিশ্ব শ্রমিক দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এ দিনটি। ঘাম, ক্লান্তি আর সম্মানের বিনিময়ে গড়ে ওঠা প্রতিটি সমাজের পেছনে থাকে শ্রমিকের অবদান। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস শুধু রাজপথেই নয়, রুপালি পর্দাতেও বারবার তুলে ধরা হয়েছে।

শ্রমিকদের গল্প, স্বপ্ন আর প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি চলচ্চিত্রের পর্দায় দর্শকদের আবেগ- অনুভূতিকে স্পর্শ করেছে। শ্রমিক দিবসে তাই আজকের বিশেষ এ প্রতিবেদন। শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ফিরে দেখা যাক এমন কিছু সিনেমা, যেখানে গল্প নয়, জীবন কথা বলেছে।

গ্র্যাপস অব র‍্যাথ (১৯৪০)
জন ফোর্ড পরিচালিত সিনেমাটিতে সেই সময়কালের মন্দার সময়কালের কৃষক পরিবারের বাস্তুচ্যুতি ও শ্রমিক জীবনের সংগ্রাম​ ওঠে এসেছে।জন স্টেইনবেকের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে দেখা যায়, ওকলাহোমার জোড পরিবার ক্যালিফোর্নিয়ায় কাজের খোঁজে পাড়ি জমায়। তাদের যাত্রা ও সংগ্রামের মাধ্যমে শ্রমিকদের জীবনের কঠিন বাস্তবতার দেখা মিলেছে পর্দায়।এতে অভিনয় করেছেন হেনরি ফোন্ডাজেন, জেন ডারওয়েল, জন ক্যারাডাইন

মেইড ইন বাংলাদেশ (২০১৯)
রুবাইয়াত হোসেনের পরিচালনায় এ সিনেমাটিতে গার্মেন্ট শ্রমিক নারীদের অধিকার ও সংগঠিত হওয়ার প্রয়াস​ উঠে এসেছে পর্দায়। এই চলচ্চিত্রে একজন গার্মেন্ট শ্রমিক নারী তার সহকর্মীদের নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টা করেন।নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ও সামাজিক বাধার চিত্র এতে ফুটে উঠেছে।​এতে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু, নভেরা রহমান, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ।
 
ছায়াবৃক্ষ (২০২৪)
ছায়াবৃক্ষে পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে চা-শ্রমিকদের জীবন ও সংস্কৃতি​। এই চলচ্চিত্রে চা-বাগানের শ্রমিকদের দৈনন্দিন জীবন, তাদের সংস্কৃতি ও সংগ্রামের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। চা-শ্রমিকদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের অধিকার নিয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র।শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই চলচ্চিত্র দর্শকদের মনে নাড়া দিয়েছে।বন্ধন বিশ্বাসের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন নিরব হোসেন ও অপু বিশ্বাস।

দ্য ল্যান্ড (১৯৭০)
মিসরীয় ড্রামা বেইজড সিনেমা ‘দ্য ল্যান্ড’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭০ সালে। পরিচালক ইউসেফ চেহিন সিনেমাটির মাধ্যমে তুলে এনেছেন কৃষকদের ওপর জমিদার শ্রেণির নিপীড়নের চিত্র। চলচ্চিত্রটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে ১৯৩৩ সালের মিশরের একটি ছোট গ্রামে, যেখানে কৃষকরা তাদের জমির সেচের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করে। সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রামের মানুষদের মধ্যে বিভাজন দেখা দেয় এবং স্থানীয় জমিদার তাদের জমি দখলের পরিকল্পনা করে।এতে অভিনয় করেছেন মুহাম্মদ এল মেলিগাই, ইয়াহিয়া চেহিন, ইজ্জত এল আলাইলি প্রমুখ।অস্কারের সেরা সিনেমা হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছিল এটি।
 
মডার্ন টাইমস (১৯৩৬)
চার্লি চ্যাপলিন পরিচালনা ও অভিনয়ে নির্মিত সিনেমাটিতে শিল্প বিপ্লব পরবর্তী সময়ে শ্রমিকের যান্ত্রিক জীবনের চিত্র​ ফুটে উঠেছে। এই চলচ্চিত্রে চ্যাপলিন এক কারখানা শ্রমিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি যান্ত্রিকতা ও পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার চাপের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। হাস্যরসের মাধ্যমে সমাজের গভীর সংকট তুলে ধরার জন্য এটি আজও প্রাসঙ্গিক এক চলচ্চিত্র।​এতে অভিনয় করেছেন চার্লি চ্যাপলিন, পলেট গডার্ড, হেনরি বার্গম্যান প্রমুখ।

হাউ গ্রিন ওয়াজ মাই ভ্যালি (১৯৪১)
১৯৪১ সালে মুক্তি পায় ‘হাউ গ্রিন ওয়াজ মাই ভ্যালি’ সিনেমাটি। হলিউডের পরিচালক জন ফোর্ড ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক রিচার্ড লিওয়েলিনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন এটি। কয়লাখনিতে কাজ করা একটি পরিবারের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে সিনেমায়। ওঠে এসেছে শ্রমিকদের মজুরি ও জীবন নিয়ে মালিকদের উদাসীনতার গল্প।সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ওয়াল্টার পিজিয়ন, মৌরিন ও’হারা, ডোনাল্ড ক্রিস্প প্রমুখ। একই বছর অস্কারে ১০টি মনোনয়ন পেয়ে পাঁচটিই জিতেছিল সিনেমাটি।
 
ইকিরু (১৯৫২)
আকিরা কুরোসাওয়া পরিচালিত এ জাপানি চলচ্চিত্রে ফুটে ওঠেছে জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া ও আমলাতান্ত্রিক সমাজে মানুষের অস্তিত্বের সংকট​। এক সরকারি কর্মচারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে একটি পার্ক নির্মাণে আত্মনিয়োগ করেন। এই চলচ্চিত্রটি মানুষের জীবনের মানে ও সমাজের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির সংগ্রামকে তুলে ধরেছে।এতে অভিনয় করেছেন তাকাশি শিমুরানোবু, কানেকোশিন ইচি হিমোরি প্রমুখ।

এমআর/এসএন


Share this news on: